প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৪০
আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত রংপুর মহানগর পুলিশের তৎকালীন সহকারি কমিশনার (এসিপি) মো: আরিফুজ্জামানকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগর থানার এলাকার অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় হাকিমপুর সীমান্ত চৌকিতে পাহারায় থাকা বিএসএফ'এর ১৪৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের সদস্যরা তাকে আটক করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতেই তাকে স্বরূপনগর থানার পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন পরিচয়পত্র ও সরকারি নথি দেখে ভারতীয় পুলিশ নিশ্চিত হয় যে তিনি বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা এবং নীলফামারী জেলার শাহীপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বিএসএফ ও স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার গ্রেপ্তার সাম্প্রতিককালে বিরল ঘটনা।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ১৪ (এ) ফরেনার্স আইন এবং ১২ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করেছে। রোববার বসিরহাট মহকুমা আদালতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে তোলা হলে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেয় অতিরিক্ত মুখ্য বিচারক।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু ঘটে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হলেও আবু সাঈদ হাত প্রসারিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশের ছররা গুলিতে তিনি নিহত হন। গ্রেপ্তারকৃত পুলিশ কর্মকর্তা সেই সময় ওই সেক্টরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কর্মরত ছিলেন।
৪৮ বছর বয়সী আরিফুজ্জামান তৎকালীন সময়ে রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার পদে ছিলেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন এবং সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিলেন।
নিজের নিরাপত্তার কারণে তিনি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এলাকায় আত্মগোপন করেছিলেন। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের অনুপ্রবেশ বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কলকাতার মেয়র ও পশ্চিমবঙ্গ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যথাযথ নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ।
উপস্থিতি ও গ্রেপ্তারের ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশি ও ভারতীয় সীমান্তে আইন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির গুরুত্ব নতুনভাবে প্রকাশ পেয়েছে।