রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আমান উল্লাহ কবির, উপজেলা প্রতিনিধি টেকনাফ (কক্সবাজার)
প্রকাশিত: রবিবার ১৯শে জুন ২০২২ ০৪:৪৯ অপরাহ্ন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিক্ষোভ

মিয়ানমারে ফিরে যেতে ক্যাম্পে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। এসময় 'আর কত দিন ..?  চলো বাসায় যাই; চলুন মায়ানমারে যাই'। 'মায়ানমার আমাদের মাতৃভূমি, অনুগ্রহ করে জাতিসংঘ, আমাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সাহায্য করুন। বিশ্ব সম্প্রদায় দয়া করে, মিয়ানমারে আমাদের অধিকার বাঁচাতে সাহায্য করুন' শ্লোগানে লেখা প্লে-কার্ড ও ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।


রবিবার (১৯ জনু) সকাল সাড়ে নয়টায় টেকনাফ উপজেলার ২৬ নং ও ২৭ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যৌথ উদ্যোগে নির্যাতিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্প ২৭ নং থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে ২৬ নং ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) অফিস চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

এতে ২৭ নং ক্যাম্পের মাস্টার ফায়সাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, 'রোহিঙ্গারা মিয়ানমার নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগণ। এখন জোরপূর্বক রাষ্ট্রহীন মানুষ। ২০১৭ সালের দেশত্যাগের পর পাঁচ বছর কেটে গেছে। আর কত দিন গৃহহীন থাকব? আমরা গৃহহীন থাকতে চাই না।  আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। স্বদেশ মিয়ানমার নিজেদের মাতৃভূমি আরাকানে ফিরে যেতে চাই এবং সেখানে যথাযথ অধিকার নিয়ে নাগরিক হিসেবে বসবাস করতে চাই।


শুধু তাই নই, রোহিঙ্গারা দীর্ঘ কাল মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা নির্যাতিত, ধর্ষণ, হত্যার শিকার। বিভিন্নসময়ে গ্রাম ও বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৮, ১৯৯২, ২০১২, ২০১৬-এর ঘটনা সহ একাধিকবার মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়। শুধুমাত্র ২০১৭ সালের গণহত্যার সময় প্রায় ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা মানুষ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।


এসময় বাংলাদেশ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, মানবিক ভিত্তিতে আমাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের (জিওবি) আমাদের খাদ্য, আশ্রয় এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছেও কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু, বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। আমরা মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। ২০১৭-২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু, আজ পর্যন্ত আমাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে দৃশ্যমান ও কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমরা রোহিঙ্গারা এখন জোরপূর্বক রাষ্ট্রহীন মানুষ। 


২০১৭ সালের দেশত্যাগের পর পাঁচ বছর কেটে গেছে। আর কত দিন আমরা গৃহহীন থাকব? আমরা আর গৃহহীন থাকতে চাই না। আমরা আমাদের এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ভবিষ্যত নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মিয়ানমারে আমাদের মাতৃভূমি আরাকানে ফিরে যেতে চাই এবং সেখানে যথাযথ অধিকার নিয়ে নাগরিক হিসেবে বসবাস করতে চাই। আমাদের নিরাপদ প্রতাবাসনে বিশ্ব এগিয়ে আসুন এবং আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে এবং সঠিক অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে বসবাস করতে আমাদের সহায়তা করুন।


এসময় কিছু দাবী উত্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে, 'অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরু, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ গ্রামে পুনর্বাসন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অধিকার, নিরাপত্তা নিশ্চিত, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা এবং রাখাইন রাজ্যে আইডিপি ক্যাম্প বন্ধ করতে হবে'।


মিছিল ও সমাবেশে ক্যাম্পের মাঝি বজলুর রহমান,  হোছাইন আহমদ, কালাম, জকরিয়াসহ রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় পুলিশ ও

ক্যাম্পের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)  সদস্যরা সতর্কাবস্থায় ছিল।