বরিশালে লঞ্চের ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে নেই তোড়জোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ১লা জুলাই ২০২২ ০৪:৫৫ অপরাহ্ন
বরিশালে লঞ্চের ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে নেই তোড়জোর

পবিত্র ঈদ-উল আজহার আর বাকী ৭দিন। প্রতিবছর কমপক্ষে তিন সপ্তাহ আগে ঈদের স্পেশাল সার্ভিস নিয়ে তোড়জোর শুরু হয়ে যায় নৌ-সেক্টরে এবং দুই সপ্তাহ আগে শুরু হয় যাত্রী পর্যায়ে অগ্রিম টিকিট দেওয়ার কাজটি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট পাল্টে দিয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এখন পর্যন্ত বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী লঞ্চ কোম্পানিগুলোর এসব বিষয় নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অন্যান্য বছর এ সময়টাতে সোনার হরিণখ্যাত লঞ্চের ভিআইপি, সেমি ভিআইপি, প্রথম শ্রেণির কেবিন, দ্বিতীয় শ্রেণির সোফার টিকেট পেতে রীতিমতো ঘাম ছোটে যাত্রীদের। এবারে কাউন্টারগুলোতেও ঈদে বাড়ি মানুষদের টিকেটের জন্য তেমন একটা ভিড় নেই।


লঞ্চের স্টাফরা বলছেন, বরাবরের মতো ‘স্পেশাল সার্ভিস’ চালানোর পরিকল্পনা এবার এখনও চূড়ান্ত করতে পারেননি মালিকরা। আর তাই কাউন্টারগুলোতেও ঈদের কেবিনের টিকিটের জন্য বিগত বছরগুলোর মতো নেওয়া হচ্ছে না কোনো স্লিপ। অবশ্য যাদের কেবিন প্রয়োজন হবে তারা যোগাযোগ করলে যতক্ষণ পর্যন্ত থাকবে, দেওয়া হবে। তবে বিগত বছরগুলোর মতো প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান


সূত্রমতে, বিগত বছরের হিসেবে এ সময়টাতে মোবাইলে প্রচুর কল আসে শুধু ঈদের লঞ্চের কেবিন কবে থেকে দেওয়া হবে এটা জানতে। কিন্তু এবারে সেই চাপ আর মুঠোফোনেও নেই বলে জানিয়ে কাউন্টার ম্যানেজরাররা বলছেন,পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়ে গেছে। যানবাহন চলছে। এবার বেশিরভাগ মানুষ শুধু পদ্মা সেতু দেখার জন্য সড়ক পথ ব্যবহার করবেন। এ কারণে লঞ্চের ওপর চাপ কম থাকবে। তবে এতে লঞ্চের যাত্রীর ওপর স্থায়ী প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ‘অ্যাডভেঞ্চার-১’ লঞ্চের ম্যানেজার সেলিম।


‘সুরভী’ লঞ্চ কাউন্টারের স্টাফ ফারহান জানান, স্পেশাল সার্ভিসের খবর এখনও তারা জানেন না। সেইসঙ্গে এবার ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষদের জন্য ঢাকা থেকে বরিশাল এবং ঈদের পর বরিশাল থেকে রাজধানীমুখী কোনো লঞ্চের কেবিনের জন্যই বিগত সময়ের মতো স্লিপ জমা নেননি। তবে দুই একদিনের মধ্যে ঈদের সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ‘সুন্দরবন’ লঞ্চ কাউন্টারের ম্যানেজার জাকির হোসেন।


সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, সেতু চালু হওয়ার পর এটি প্রথম ঈদ। লঞ্চে যাত্রী কিছুটা কমবে তা নিশ্চিত। যদিও আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আর এসব কারণে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। 


তিনি বলেন, লঞ্চের সঙ্গে বাসের ভাড়ার হিসেবে কষলে দেখা যায়, একটি বাসের টিকেটের ভাড়া দিয়ে লঞ্চে দুইজন যাত্রী বরিশালে আসতে পারে। আবার লঞ্চে ছোট শিশুদের কোনো ধরণের টিকিট বা ভাড়া প্রয়োজন হয় না। তাই হিসেব কষলে স্বাভাবিক সময়ে বেশিরভাগ মানুষ লঞ্চেই যাত্রা করবে বলে আশা করেন তিনি।


যাত্রীদের কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া মিলছে না জানিয়ে বরিশাল-ঢাকা রুটের সুরভী লঞ্চের ব্যবস্থাপক মো. বেল্লাল হোসেন জানান, এবার এখনও বিশেষ সেবা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও আগাম টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলছে।


যদিও এবারে কাউন্টারে ঈদের আগের টিকিট নিতে এসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। সাইফুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, আমার ছেলে ঢাকা থেকে ঈদের আগে বরিশালের বাড়িতে আসবে। আর যেহেতু ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চের টিকিট বরিশাল থেকেই দেওয়া হয় তাই প্রতিবারই আমি নিজেই ছেলের জন্য কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করি। এবারই প্রথম সোনার হরিণ অনায়াসে পেয়ে গেছি। চিন্তা করেছিলাম লঞ্চের কেবিনের টিকিট না পেলে বাসে টিকিট করতে বলবো ছেলেকে।


বিআইডব্লিউএ এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক মো. কবির হোসেন জানান, বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলের জন্য অনুমোদন আছে ২৪টি লঞ্চের। গত ঈদে সর্বোচ্চ ১৮টি লঞ্চ চলাচল করেছে। তবে এবার কি হবে এখনও জানেন না তারা।


ঈদে বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিসের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্বান্তের কথা না জানলেও বিগত বছরগুলোর মতো প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।


এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চের ডেকের সরকার নির্ধারিত ভাড়া সাড়ে তিনশত টাকার কিছুটা নিচে হলেও,পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর তা কমিয়ে এখন দুই থেকে আড়াইশত টাকা নেওয়া হচ্ছে।