বরিশালে পদ্ম ফুলের আভা ছড়িয়ে পড়ছে শতবর্ষী চান পুকুরে

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: বুধবার ২৭শে জুলাই ২০২২ ০৬:৩২ অপরাহ্ন
বরিশালে পদ্ম ফুলের আভা ছড়িয়ে পড়ছে শতবর্ষী চান পুকুরে

বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও মডেল স্কুল সংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএ’র হীম নীড় ও ‘চাড়ার বাংলো’ বা ‘চান বাংলো’ সংলগ্ন পুকরে সুদীর্ঘকাল ধরে ফুটছে হাজারো বিপুল স্বেতপদ্ম ফুল। যাকে জলজ ফুলের রানী বলা হয়। প্রতিদিনই এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করছেন অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমীরা। পুকুরটি হয়ে উঠেছে সৌন্দর্য্য পিয়াসীদের চিত্ত বিনোদনের নতুন কেন্দ্রস্থল। 


এটি কোন দীঘি, বিল বা হাওর নয়। পুকুরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই লাল পদ্মের আভা। ফুলে আর পাতায় ভরে গেছে সমস্ত পুকুর। পুকুরের দিকে তাকালে দেখা মিলবে শুভ্রতার প্রতীক এই পদ্ম ফুলের সমারোহ। এখনকার প্রজন্ম বই পড়ে জেনেছে পদ্মদিঘি, পদ্মবিলের কথা। সেই ছবির ফুল আজ তাদের হাতের নাগালে। তাই যেন এই পদ্ম পুকুর নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কংক্রিটের এই শহরে অনেকেই ছুটে আসছেন দৃষ্টি নন্দিত এই দৃশ্য দেখতে। 


পুকুরে ফুটে থাকা এই পদ্ম তৃষ্ণা মেটাচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। ‘চান বাংলো’ সংলগ্ন পুকরে স্নিগ্ধতার রংয়ে যেন একাকার প্রকৃতি। জলের উপরে বেছানো সবুজ পাতা ভেদ করে হেসে ওঠে সাদা হাজারো পদ্ম। কোথাও ফুটেছে আবার কোথাও ফোটার অপেক্ষা। 


জানাযায়, তৎকালীন বৃটিশ যুগে ‘ইন্ডিয়ান জেনারেল নেভিগেশন-আইজিএন’ কোম্পানী তার পূর্ব বাংলার সদর দফ্তর বরিশালে স্থাপন করে। সে সময় বর্তমান বরিশাল ক্লাব থেকে শুরু করে পূর্বে বাঁধ রোড, দক্ষিণ ও পশ্চিমে রাজা বাহাদুর রোড সহ বাঁধ রোডের পূর্ব পাশে কির্তনখোলা নদী পর্যন্ত প্রায় ৪০একর জমি নিয়ে কোম্পানীর সদর দফ্তর ও মেরিন ওয়ার্কসপ স্থাপন করা হয়। আইজিএন কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার-এর বাসভবন ছিল বর্তমান ‘হীম নীড়’ এ। 


একই এলাকার মধ্যে লোহার খুটির ওপর কাঠের পাটাতন ও টালির ছাদের ঘরটিকে বলা হত ‘চান বাংলো’ বা ‘চাড়ার বাংলো’ হিসেবে। এটি মূলত কোম্পানীর বৃটিশ কর্তাদের পরিদর্শন বাংলো হিসেবেই ব্যবহৃত হত। ঐ বাসভবন ও চান বাংলো এলাকার অভ্যন্তরে একটি সুদৃশ্য পুকুর খনন করা হয়। যাতে ঘাটলা সহ সুইমিং পুলের আদলে অবকাঠামোও স্থাপন করা হয়েছিল। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে কাঠ গোলাপের গাছ সহ নানা বাহারী ফুলের বাগানটি ছিল পুরো এলাকা যুড়ে। 


জানা যায়, বৃটিশ সাহেবরা পুকুরটিতে পদ্ম ফুলের চাষ করেন। সেই থেকে বরিশালের হীম নীড়ের পুকরের পদ্ম ফুলের নাম রয়েছে এ নগরী জুড়ে। দেশ বিভাগের পরে পাকিস্তান আমলে উত্তরাধিকার সূত্রে হীমনীড়-এর মালিকানা লাভ করে পাকিস্তান রিভার স্টিমার্স-পিআরএস। কিন্তু ১৯৫৮সালে পূর্ব পাকিস্তান ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথারেটি-ইপিআইডব্লিউটিএ গঠিত হবার পরে হীম নীড় সহ পাশের মেরিন ওয়ার্কসপ সহ পুরো ৪০একর সম্পত্তি তাদের কাছে হস্তান্তর করে সরকার। 


সে থেকে হীমনীড় মেরিন ওয়ার্কসপের ম্যানেজার-এর বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ১৯৮৪সালে বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দফ্তর বরিশালে স্থানন্তরের পরে এ বাড়ীটিতে কতৃপক্ষ চেয়ারম্যান ও চান বাংলোতে সচিব-এর দফ্তর স্থাপন করা হয়। 


কিন্তু এর পরে ধীরে ধীরে অলিখিতভাবে কতৃপক্ষের সদর দফ্তর বরিশাল থেকে হারিয়ে যায়। হীম নীড়-এর ভবনটি কতৃপক্ষের বরিশাল বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলীল দফ্তরের রূপান্তর করা হয়। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার পরে বছর কয়েক আগে চান বাংলো’টিও সংস্কার করে পুনরায় চালু করা হয়েছে। কিন্তু এসব কিছু ছাপিয়ে হীম নীড়-এর পদ্ম পুকুর সবার নজর কাড়ে এখনো।


এবিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ জানান, “আমি এখানে যোগদানের পর থেকে প্রতি বছর পুকুরের আগাছা পরিস্কার করে পদ্ম ফুলের বিজটাকে বাচিয়ে রাখার চেস্টা করি”। তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আপনারা দেখবেন পুকুরের একপাশ থেকে একটি ছোট লোহার ব্রিজের কাজ চলছে।সরকারের কোনো বরাদ্দ ছাড়াই আমার দপ্তরের বিভিন্ন কাজের টাকা সাশ্রয় করে এখানের ছোট ছোট কাজ গুলো করছি”। 


তিনি বলেন, “যেকোনো বিশেষ দিবসে প্রশাসনের উদ্ধতন কর্মকর্তা, সুশিল সমাজ, সাংবাদিকসহ দূর দূরান্তের প্রকৃতিপ্রেমীরা যাতে করে পদ্ম ফুলের মূল সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে পারেন সেই লক্ষ্যেই আমার এই উদ্যোগটা গ্রহণ করা”।