আজ শেষ হচ্ছে সমুদ্রে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের কাগুজে নিষেধাজ্ঞা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আনোয়ার হোসেন আনু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: রবিবার ২৩শে জুলাই ২০২৩ ০৬:১৩ অপরাহ্ন
আজ শেষ হচ্ছে সমুদ্রে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের কাগুজে নিষেধাজ্ঞা!

নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে আজ (২৩ জুলাই) মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে সমুদ্রে মাছের সুষ্ঠ প্রজনন ও উৎপাদন বাড়াতে ৬৫ দিনের কাগুজে নিষেধাজ্ঞা। সরকার সমুদ্র ও নদী মোহনায় মাছধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও এ বছর পালিত হয়নি অবরোধ। সমুদ্রে মাছ শিকার, বাজারজাত করণ,পরিবহন সবই চলেছে ফ্রি স্টাইলে। চলছে বরফ উৎপাদন ও বিপনন। অবরোধের মধ্যে সমুদ্রে মাছ শিকারে যায়নি এমন জেলের সংখ্যা শতকরা বিশ ভাগ রয়েছে। ৮০ ভাগ জেলেই সমুদ্রে মাছ শিকারের মহা উৎসবে মেতে ছিলেন।


মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই নিরব ভূমিকায় উপকুল জুড়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। কোটি কোটি টাকার লেনদেনে জেলেরো সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ট্রলার প্রতি নেয়া হয়েছে ৫-১০ হাজার টাকা করে। কুয়াকাটা, আলীপুর-মহিপুর, পাথরঘাটা, রাঙ্গাবালী, চরফ্যাশন সহ উপকুলীয় এলাকার মৎস্য আড়তগুলোতে ওপেনে বেচাবিক্রি চলেছে। তবে অবরোধকালীন সময়ে দিনের বেলায় বেচাকেনা কম হলেও রাতের বাজার জমজমাট ছিল।


অবরোধকালীন সময়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়নি এমন জেলের সংখ্যা খুবই কম ছিল। যেসব জেলেরা অবরোধের মধ্যে মাছ শিকার থেকে বিরত ছিল তারা আগামীকাল ২৪ জুলাই থেকে সমুদ্রে যাবেন ইলিশ শিকারে। ইতোমধ্যে নৌকা মেরামত, ছেড়া ফুটা জাল মেরামত করে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।


 এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে শত শত ছোট নৌকা ও গভীর সমুদ্রে মাছধরা বড় ট্রলার অন্যান্য সময়ের মত মাছ ধরতে দেখা গেছে। যা চোখে পড়ার মতো। আর প্রকাশ্যে মাছ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন করা হলেও মৎস্য প্রশাসন কিংবা নৌ পুলিশেকে কোনো অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। জেলে ও মৎস্য ব্যাবসায়ীদের এসব অবৈধ এবং অনৈতিক কর্মকান্ড রোধে কোনো তৎপরতা ছিলনা। কোস্টগার্ড ও মৎস্য প্রশাসন দ্বায়সারাভাবে দু’য়েকটি অভিযান চালালেও তা ছিল লোক দেখানোর জন্য।


ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন নদীর মোহনায় এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য শিকার, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের মৎস্য বিভাগ। তবে মৎস্য অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সরকারের জারিকৃত এই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে জেলেদের সমুদ্রে মাছ শিকারে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। মৎস্য বন্দরসহ খুচরা বাজারে ক্রয় বিক্রয় এবং পরিবহনেও সহযোগিতা করেছেন। প্রতিনিয়ত বেচাকেনা, পরিবহন প্রকাশ্যে চললেও কোন অভিযান চোখে পরেনি। এ নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের।


আলীপুর-মহিপুর, কুয়াকাটা সহ উপকূলীয় এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক জেলেরা জানান, সমুদ্রে সরকারঘোষিত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মৎস্য কর্মকর্তা, প্রশাসনসহ সকলকে ম্যানেজ করে বীরধর্পে মাছ শিকার থেকে বেচাকেনা সবই চলেছে। তবে তারা যারা অবরোধ মেনে মাছ শিকারে যায়নি তাদেরকে আড়তদাররা চাপ সৃস্টি করেছে মাছধরার জন্য। তবুও তারা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে আগামীকাল থেকে সমুদ্রে মাছ শিকারে যাবেন।


কুয়াকাটা উপকূলে বেশ কয়েক জন জেলের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন সময়ে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে মাছ শিকার করে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। তবে মৎস্য বিভাগ ও নৌ পুলিশের উদাসীনতায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে উপকূলের কিছু অসাধু জেলেরা নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই সমুদ্রে মাছ শিকার করে আসছে; যা আসলেই দায়িত্বহীনতার সামিল। সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মত দূঃসাহস বলে মনে করেন অনেকেই ।


কুয়াকাটা আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ নিজাম শেখ বলেন, অবরোধকালীন সময়ে গভীর সমুদ্র মাছ শিকার করলেও সমুদ্র উপকুলবর্তী ছোট ছোট নৌকা মাছ শিকার থেকে বিরত রয়েছে। এই জেলে নেতা আরও জানান, পায়রা বন্দর সংলগ্ন গভীর সমুদ্রে নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড থাকলেও তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তিনি আরও জানান, সমুদ্রে অবরোধকালীন ভারতীয় জেলেদের মাছধরা বন্ধ করতে না পারলে কোন অবরোধই সফল হবে না বলে তার অভিমত।

 

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা এ প্রতিনিধিকে বলেন, গত ১৯ মে থেকে শুরু হওয়া ৬৫ দিনের অবরোধ আজ (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত ১২ টায় শেষ হচ্ছে। উপকূলের বেশিরভাগ জেলেরাই অবরোধ পালন করলেও কিছু কিছু জেলেরা অবরোধ অমান্য করে সমুদ্রে মাছ শিকার করেছে। এদের মধ্যে অনেককেই আমরা আইনের আওতায় এনে জেল জরিমানা করেছি। সমুদ্রে অবরোধকালীন সময়ে মাছ শিকার, বেচাকেনা ও বাজারজাত করার বিষয়ে তার জানা নেই বলে দাবী করেন তিনি। তারমতে সুন্দরভাবে অবরোধ সম্পন্ন হয়েছে।  অতীতের তুলনায় জেলেরা অনেক সচেতন হয়েছে। আগামীকাল থেকে উম্মুক্তভাবে জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকার করতে পারবেন।