ঠাকুরগাঁওয়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাসুদেব ওরফে বসুর (৪৫) নামে এক ভন্ড ওঁঝার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা জানান দিন দিন এলাকায় ভন্ড ওঝার উৎপাত বেড়ে গেছে আর এইসব ভন্ড ওঁঝার কাছে নিরীহ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এভাবে নিঃষ হচ্ছে শত শত পরিবার।
এমন একজন ভন্ড ওঝার খবর পাওয়া গেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের বাসুদেব বর্মন ওরফে বসু।
সবশেষে ভন্ড ওঁঝা বসুর খপ্পরে পরে চিকিৎসার নামে নিঃষ হয়েছে ওই এলাকার দীলিপ চন্দ্র। দীলিপ চন্দ্রর বলেন আমার স্ত্রী কল্পনা রানী শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা সেবা নিতে দারস্থ হয় ভন্ড ওঝা বসুর নিকট । চিকিৎসার নামে ৫ টি মোরগ এবং নগদ অর্থ হাতিয়ে নেন বসু। চিকিৎসা দেওয়ার পরও রোগীর কোন সুস্থতা না হওয়ায় আবার ওঁঝা বসুর কাছে গেলে তিনি আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করেন।
স্থানীয় ভুক্তভোগী, ভরেন চন্দ্র বলেন আমার একটা মামলার জামিন হচ্ছে না তখন ভন্ড ওঝা বসু আমাকে বলে কোন সমস্যা নেই আপনি আমাকে পাঁচটি মোরগ, আগর বাতি এবং নগদ ১৫ শত টাকা দেন আমি সরল মনে এবং মামলা থেকে জামিনসহ মামলা নিষ্পত্তির আশায় বসুকে মোরগ, আগরবাতি ও নগদ ১৫ টাকা দেই। তিনি বলেন কাজ তো কিছুই হয়নি পরে ওঝা বসুকে বললে সে আমার কথায় কর্ণপাত করেনি আমি এরকম ভন্ড ওঝার শাস্তি দাবি করছি।
এরকমভাবে ভন্ড ওঁঝা বসুর নিকট প্রতারিত হয়ে নিঃষ ভুক্তভোগী, রঞ্জিত রায়, হরেক লাল, শফিকুলসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন ভন্ড ওঝা বাসুদেব ওরফে বসুর উৎপাতে দিশেহারা হয়ে পরেছে অনেক নিরীহ মানুষ তারা বলেন দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি করেন।
ভন্ড ওঁঝা বসুর প্রতিবেশী লালমোহন বলেন, আমার আরেক প্রতিবেশী দিলীপ বর্মনের স্ত্রী শারীরিক ভাবে অসুস্থ হলে দিলীপ বর্মন বিভিন্ন জায়গায় ঝাড়ফুঁক করে তবুও সুস্থ না হওয়ায় প্রতিবেশী ওঝা বসুর নিকট পরামর্শ নিতে গেলে তিনি ৫ টি মোরগ, আগরবাতি ও নগদ ১৫ শত টাকা নেন এবং সে রোগীকে সুস্থ করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন।
তিনি আরও বলেন সুস্থ তো দুরের কথা কিছু দিন পরে ঢোলারহাট বাজারে ডেকে বলে টাকা নিয়ে আসছেন? তখন দিলীপ বর্মন গরিব মানুষ তার কাছে এতো টাকার চাপ না দিয়ে রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে দিন একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ভন্ড ওঝা বসু বলেন ২০ হাজার টাকা লাগবে তাহলে চিকিৎসা দিব নইলে চলে যান।
এ বিষয় ভুক্তভোগী দিলীপ বর্মন জানান আমি খুব গরীব এবং অসহায় আমার স্ত্রী কিছু দিন আগে অসুস্থ হয়। বিভিন্ন জায়গায় ঝাড়ফুঁক করে ওঝা বসুর কাছে যাই তখন বসু আমাকে ৫ টি মোরগ, আগরবাতি ও নগদ ১৫ শত চায় রোগী সুস্থ হবে আশায় আমি এগুলো ওঝাকে দেই। কয়েক দিন গত হওয়ার পরে আবার ওঝা বসুর কাছে গেলে তিনি আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করেন আমি গরীব অসহায় মানুষ কোথায় পাব এত টাকা। আবেগপ্লাবূত হয়ে এক পর্যায় দিলীপ বর্মন সংবাদ কর্মীদের মাধ্যমে ভন্ড ওঝা বাসুদেব ওরফে বসুর দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি করেন।
এ ঘটনা সম্পর্কে ওঁঝা বাসুদেব ওরফে বসুর নিকট জানতে চাইলে প্রথমে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি। পর্বতীতে তিনি বলেন আমি একজন ছোট খাটো মাহাৎ (ওঁঝা) আমার কাছে তারা চিকিৎসার জন্য আসছিল আমি যতটুকু পেরেছি চিকিৎসা সেবা দিয়েছি।
তবে ২০ হাজার টাকা দাবি বিষয় তিনি বলেন আমি এমনিতেই বলেছি ২০ হাজার টাকা দেন নইলে চিকিৎসা হবে না। ওঝার বিষয় প্রশিক্ষণ কিংবা বৈধ কাগজ পত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন আমার কোন কাগজ পত্র নেই কারণ আমি একজন মূর্খ মানুষ ঝারফূক চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি।
এ বিষয় ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডাঃ নুর নেওয়াজ আহমেদ এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান মাহাৎ বা ওঁঝা যে নামেই বলেন এগুলোর কোন সরকারি প্রশিক্ষন কিংবা বৈধ লাইসেন্স সরকারি ভাবে দেওয়া হয়না। তারপরও এসব ওঁঝা যদি গ্রামের নিরীহ মানুষের কাছে চিকিৎসার নামে অর্থ হাতিয়ে নেন তাহলে এই অবৈধ তান্ত্রিক ওঁঝার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।