হাত-পা অবশ, মুখে শুধু আর্তি

এক সময়ের সুস্থ ও পরিশ্রমী যুবক সোহেল রানা এখন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন। বয়স মাত্র ৩৫ হলেও গত চার বছর ধরে পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন তিনি। কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার হাপুড়খাড়া গ্রামের মৃত সাহাজ উদ্দিনের পুত্র সোহেল রানা পরিবারসহ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার শয্যাশায়ী অবস্থায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে সংসারের চাকা। জীবিকার তাগিদে পাঁচ বছর প্রবাসে কাটিয়ে দেশে ফিরেছিলেন পরিবারের পাশে থাকার আশায়। কিন্তু সুখের স্বপ্ন এক সময়ের পিঠের ব্যথা আজ নিয়েছে তার চলার শক্তি।

২০১৯ সালে হঠাৎ শুরু হওয়া পিঠের ব্যথাকে প্রথমে গুরুত্ব দেননি সোহেল। পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার করানো হয়। অপারেশনের পর অবস্থা আরও জটিল হয়ে যায়। প্রথমে বাম পাশ, পরে ডান পাশও অবস হয়ে যায়। এখন তার দেহের নিচের অংশে কোনো অনুভূতি নেই। দুই হাত ও মুখ ছাড়া বাকি শরীর অচল।

সন্তানদের মুখ চেয়ে বেঁচে থাকতে চান সোহেল। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। স্ত্রী নাজমা আক্তার বলেন, "আমার স্বামী বেঁচে থেকেও মৃতের মতো বিছানায় পড়ে আছেন। চলাফেরা তো দূরের কথা, বসতেও পারেন না। সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় আছি।"

সোহেলের মা রাবেয়া বেগম চোখের জল মুছে বলেন, "সব সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছি ছেলেকে সুস্থ করতে, কিন্তু কিছুই হলো না। এখন আর কিছুই করার নেই আমাদের।"

এদিকে গ্রামের মানুষ যতটুকু পারেন সাহায্য করছেন, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। স্থানীয় বাসিন্দা জামাল মুন্সি বলেন, “এমন একজন অসহায় মানুষকে সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব। সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।”

দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মো. ইব্রাহীম হোসেন জানান, মেরুদণ্ডজনিত সমস্যা থেকে এমন অবস্থা হতে পারে। তবে উন্নত চিকিৎসা করানো গেলে তার পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।

অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ। সন্তানদের মুখ চেয়ে সমাজের সকল সচেতন মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন সোহেলের পরিবার।