প্রকাশ: ১ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মশিউর রহমানকে মারধর ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সকল পদ স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটি রাতেই তার সদস্য পদসহ সব দায়িত্ব স্থগিত করে একটি অফিসিয়াল পত্র প্রেরণ করে।
গতকাল দুপুর পৌনে দুইটার দিকে হাকিমপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে এই ঘটনা ঘটে। চিকিৎসক মশিউর রহমান জানান, হাসপাতালের এক রোগী ও তার পরিবারের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয় এবং পরে সেসময় তিনি কর্তব্যরত ছিলেন। এ সময় সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ও তার অনুসারীরা এসে তাকে জোরপূর্বক বহির্গমন করতে বাধ্য করেন, গালাগালি করেন এবং এক পর্যায়ে মারধর করে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। হাসপাতালে কর্মরত অন্যরা তাকে উদ্ধার করতে গেলে তারা আহত হন।
হাকিমপুর পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনার সময় বলেছেন, তিনি ডাক্তারকে মারেননি, তার সঙ্গীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে এবং মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়া হয়েছে।
হাকিমপুর উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রান্ত ডাক্তারদের কাছে মাফ চেয়েছেন এবং পরিস্থিতি শান্ত করেছেন।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, একজন চিকিৎসকের ওপর এমন হামলা স্বাস্থ্য খাতে লজ্জাজনক ঘটনা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হাকিমপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক এস এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়নি। চিকিৎসকরা অভিযোগ না দিয়ে মাফ করেছেন।
দিনাজপুর সিভিল সার্জন ড. মোঃ আসিফ ফেরদৌস বিষয়টি জেনেছেন এবং বলেন, চিকিৎসকদের ওপর হামলা বরদাস্তযোগ্য নয় এবং এই ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত আহবায়কের সদস্যপদসহ সকল দায়িত্ব স্থগিত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ জেলা আহবায়ক ও সদস্য সচিবের অনুমোদন সাপেক্ষে গৃহীত হয়েছে।
ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা এক ঘন্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে হামলার কারণে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে হাসপাতালের পরিবেশ শান্ত রাখার চেষ্টা চলছে। সকল পক্ষের কাছে এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।