প্রকাশ: ৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২৯
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চালাচ্ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর বাসস জানান, দ্বীপটির উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় জনগণের জন্য বিকল্প আয়ের উপায় নির্ধারণের পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।
দ্বীপের প্রকৃতি পুনরুদ্ধার ও সুস্থ রাখতে পর্যটন নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক সাম্প্রতিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত এক বছরে পরিবেশ সুরক্ষা, বন সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশের শপিংমলগুলোতে পলিথিন ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। পলিথিন উৎপাদন কারখানা ও অন্যান্য স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান চলছে। এছাড়া পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী মূল্যে পাটের ব্যাগ সরবরাহের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথ প্রকল্প শুরু হয়েছে।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস এবং ঢাকার সাভার ও আশুলিয়াকে ‘দূষিত বায়ুমণ্ডল’ হিসেবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধ সীসা কারখানা বন্ধ করা হয়েছে এবং শব্দ দূষণ কমাতে তরুণদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গাজীপুরের গাছা খাল দূষণকারী কারখানাগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং সব পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য নতুন কর্মসূচি অনুমোদিত হয়েছে এবং ৩৭টি অফিস ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাহাড় সংরক্ষণের জন্য ১৬টি জেলার তালিকাভুক্ত পাহাড়ের তথ্য অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং নিয়মিত নজরদারি চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ৩৫১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে এবং ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত হয়েছে।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেও বড় অগ্রগতি হয়েছে। কক্সবাজার ও সোনাদিয়ায় ১০ হাজার একরের বেশি বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। পূর্বাচলে বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে এবং গত এক বছরে পাঁচ হাজার একর বনায়ন করা হয়েছে। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা উৎপাদন ও রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মানব-হাতি সংঘাত কমাতে ১৫৯টি ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ময়ূর ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বিপন্ন প্রজাতিগুলোকে সুরক্ষিত করা হচ্ছে। জলাভূমিগুলোকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে এবং ২৯৩টি বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন অভিযানে ৫ হাজারের বেশি প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে।
জাতীয় উদ্যান ও ইকোপার্কগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার ও পিকনিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী আইন আধুনিকীকরণ ও নতুন আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ের এই সব উদ্যোগ পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা একটি জলবায়ু প্রতিরোধী ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।