ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বর্ষণের কারণে অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত কয়েক দিনের হালকা ও ভারী বর্ষণে সড়কের উপরিভাগ ফেটে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও রাস্তা উঁচু হয়ে টিউমারের মতো ফুলে উঠেছে, যা চালকদের জন্য মারাত্মক বিপদ। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ পুঁতে বিপদসংকেত দিয়ে দুর্ঘটনা এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা লোকাল বাসস্ট্যান্ড থেকে বরিশাল নতুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়ে গর্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। বিশেষত ভূরঘাটা, ইল্লা, বার্থী, টরকী, গৌরনদী ও বাটাজোর এলাকায় অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। টরকী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি বড় গর্তের পাশে বাঁশ দিয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে যাতে গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা না ঘটে।
রাস্তার কার্পেটিং উঠে গিয়ে অনেক জায়গায় কাদা জমেছে। কোথাও রাস্তার একপাশ দীর্ঘদিন ধরে খোঁড়া ও ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তা ঢেউয়ের মতো উঁচু-নিচু হওয়ায় গাড়ি চালানো এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যানবাহন ধীরগতিতে চলতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটছে, গাড়ি বিকল হচ্ছে আর যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি বাড়ছে।
গৌরনদী থেকে উজিরপুর পর্যন্ত সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বিটুমিন ও পাথরের কার্পেটিং উঠে সড়ক কাদা মাটির রূপ নিয়েছে। দুই পাশে কেটে রাখা ঢালে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছে। যানবাহন গর্ত এড়িয়ে চলতে গতি কমাচ্ছে, যা যাতায়াত সময় বাড়াচ্ছে এবং ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম জানান, ভাঙাচোরা সড়ক ও যানজটের কারণে বাজারে পণ্য আনা-নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ভ্যান চালকরা ঝুঁকি নিতে চান না, নিলে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। পরিবহন চালকরা জানান, গর্তে গাড়ির চাকা, টায়ার-টিউব ও ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা মেরামতের খরচ বাড়াচ্ছে। বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম জানান, জুন থেকে টানা বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি শেষ হলে সংস্কার শুরু হবে বলে জানা গেছে।
বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কেও অবস্থা একই রকম। ভারী বর্ষণে পিচ নরম হয়ে যানবাহনের চাপের কারণে নতুন গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রায় ৭১ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটাগামী যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও সড়কের উন্নয়ন হয়নি। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার যানবাহন এই রুটে চলাচল করে, তবে সড়কের বেহাল দশায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে।
শ্যামলী এনআর পরিবহনের চালক কেরামত আলী জানান, গর্তের কারণে স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হচ্ছে। গ্রীনলাইন সেবা পরিবহনের চালক মো. ইসমাইল দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সড়ক আরও নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সওজ বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী কমারেশ বিশ্বাস বলেন, বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পিচ উঠে গর্ত হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ দল কাজ করছে। পটুয়াখালী অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ করিম জানান, যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ঢাকা-বরিশাল ও বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের এই বেহাল দশা শুধু যাত্রী ও চালকদের নয়, দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দীর্ঘ যানজট, গাড়ির ক্ষতি, পণ্যের পরিবহনে ব্যাঘাত এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি মিলিয়ে দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি সবার।