প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৫
আজ ২৫ আগস্ট, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে আসার ৮ বছর পূর্ণ হলো। রোহিঙ্গারা এই দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত করে আসছে। সকাল ৯ টার দিকে টেকনাফের জাদিমুড়া ২৭ নং এবং লেদা ২৪ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথকভাবে কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা লিডারসহ শতশত রোহিঙ্গা অংশ নেন।
সভায় রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনারা হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা, নির্যাতন ও বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়। এই নৃশংসতার স্মরণে ২০১৮ সাল থেকে এই দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। তারা বলেন, এই স্মৃতিচারণের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা অতীতের কষ্ট ভুলবে না এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও আত্মত্যাগের মূল্য জানতে পারবে।
রোহিঙ্গা নেতারা আরও জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যার ঘটনা বিশ্বের নজরে আনা এবং আন্তর্জাতিক বিচার নিশ্চিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। যদিও আজকের দিনে কোনো নতুন দাবী উপস্থাপন করা হয়নি, তবু নেতারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা যত দ্রুত সম্ভব নিজ দেশে ফিরে যেতে চান। তবে মিয়ানমারের ১৩৫টি জাতি গোষ্ঠীর মতো রোহিঙ্গাদেরও স্বাধীনতা, নাগরিকত্ব ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন দাবী ও সেনাদের দ্বারা নির্যাতিত ছবি সম্বলিত প্লেকার্ড, ফেস্টুন এবং ব্যানার প্রদর্শন করেন। ‘আর ন চাই রিফুজি লাইফ’, ‘জেনোসাইডের বিচার চাই’, ‘রোহিঙ্গার আজাদী চাই’, ‘রোহিঙ্গা শান্তি চাই’, ‘আরাকানের আজাদী চাই’—এই শ্লোগানগুলোতে সভাস্থল মুখরিত হয়।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ২০১৭ সালে সেনাদের হাতে ১০০ নারী ধর্ষিত, ৩০০ গ্রাম নিশ্চিহ্ন, ৩৪ হাজার শিশু এতিম, ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এছাড়া ৯,৬০০ মসজিদ, ১,২০০ মক্তব, মাদ্রাসা ও হেফজখানায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এখনও লাখের বেশি রোহিঙ্গা আরকান রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং বহু রোহিঙ্গা বন্দি রয়েছেন।
বর্তমানে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে সেনা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে বলির ফাটা হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিম। ইতিমধ্যে আরকান আর্মি প্রায় পুরো অঞ্চল দখল করেছে, এবং নতুন করে লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
টেকনাফ ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কাউসার সিকদার জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাভাবিক নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। যে কোনো অপতৎপরতা রোধে পুলিশ সদস্যরা সদা প্রস্তুত রয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের গণহত্যার এই স্মরণযাত্রা শুধু অতীতের কষ্টের কথা মনে করিয়ে দেয় না, এটি আন্তর্জাতিক সমর্থন ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আহ্বানও বহন করছে। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার, নিরাপদ জীবন ও নিজস্ব ভূমিতে পুনর্বাসন নিশ্চিত করা তাদের মূল দাবি।