প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৩
আজ ২৫ আগস্ট, রোহিঙ্গা গণহত্যা ও বাংলাদেশে আশ্রয়ের আট বছর পূর্ণ হলো। ২০১৭ সালের এই দিনে মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কিন্তু এতদিনেও তাদের প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। উল্টো নতুন করে আরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যা উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে।
রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, আরকানে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হলে তারা স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফিরতে প্রস্তুত। ক্যাম্পগুলোতে গণহত্যা দিবস পালন করে নিহতদের স্মরণ ও আন্তর্জাতিক বিচারের দাবি জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মতে, এই দিন তাদের আত্মত্যাগের স্মরণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সংগ্রামের কথা জানানোর প্রতীক।
এদিকে নতুন-পুরনো মিলিয়ে এখন প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এত বিশাল জনসমাগমের কারণে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার। কর্মসংস্থানের সংকট, অপহরণ, হত্যা, মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধের বৃদ্ধি তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি স্থানীয় অর্থনীতি ও সমাজে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। সস্তা শ্রম বিক্রির কারণে স্থানীয়দের কাজের সুযোগ কমে যাচ্ছে। বনভূমি ধ্বংস, চাষাবাদে বাধা ও পর্যটন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এনজিও খাতে চাকরি হারানো স্থানীয় শিক্ষকদের আন্দোলনও এ সংকটকে আরও প্রকট করেছে।
টেকনাফের শালবাগান ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা বজলুর ইসলাম জানান, তাদের মূল দাবি নাগরিকত্ব ও নিজ জমিজমা ফেরত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় মিয়ানমারে নিরাপদ আরকান গড়ে উঠলে দ্রুত প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা বাড়ছে, যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রত্যাবাসনই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে তাদের মত।
এপিবিএন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে এবং যেকোনো অপতৎপরতা ঠেকাতে পুলিশ প্রস্তুত। তবে গণহত্যা দিবস পালনের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি চাওয়া হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না হলে এ সংকট আরও গভীর হবে। তাই আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমারকে দায়বদ্ধ করা জরুরি।