প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:২৪
নওগাঁর নিয়ামতপুরে সরকারি ছুটির দিনে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত মাছ শিকারের ঘটনা ধরা পড়েছে। নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের আঘোর গ্রামের একটি পুকুরে তিন থেকে চারটি সরকারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। গাড়িগুলোতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজাউল করিম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক, পত্নীতলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুয়েল মিয়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন নাচোল উপজেলার সহকারী কমিশনার সুলতানা রাজিয়া।
স্থানীয়রা জানান, পুকুরটি লিজ নিয়েছিলেন মো. রাসেল নামে এক ব্যক্তি, যিনি সাধারণ মানুষকে দুই দিনের জন্য ২০ হাজার টাকায় মাছ ধরার সুযোগ দিতেন। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা বিনা খরচে পুকুরে মাছ শিকার করতে আসেন। তারা এমনকি পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও বন্ধুর নিমন্ত্রণে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে উপস্থিত হয়েছেন।
নিয়ামতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এটি সরকারি দিঘি, তাই মাছ ধরতে গিয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা কর্মকর্তা বলছেন, বন্ধুর দাওয়াতেই এসেছেন। অন্যদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামও মাছ ধরা স্বীকার করেছেন, কিন্তু এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
লিজকৃত পুকুরের মালিক মো. রাসেল জানান, সাধারণ মানুষের জন্য নির্দিষ্ট ফি রয়েছে, কিন্তু কর্মকর্তারা কোনো অর্থ দেননি। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সাক্ষাৎ করে বিস্তারিত জানাতে ইচ্ছুক।
স্থানীয় সচেতন মহল এবং সমাজতান্ত্রিক দলের নওগাঁ জেলা শাখার আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল এই ঘটনা নিন্দনীয় উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, সরকারি সম্পদ ব্যক্তিগত বিনোদনে ব্যবহার করা সরকারি নিয়ম ও আইন লঙ্ঘন। এটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জনগণের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা ছড়ায়।
সরকারি গাড়ি মূলত দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ। অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করলে তা অপব্যবহার হিসেবে গণ্য হবে এবং শাস্তিযোগ্য। মুকুল জানান, সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে নিজ কর্মস্থল এলাকা থেকে বাইরে গিয়ে মাছ শিকার করা দায়বদ্ধ কর্মকাণ্ড।
প্রসঙ্গত, পত্নীতলা উপজেলা সহকারী কমিশনার জুয়েল মিয়াকে ফোন করা হলেও তিনি কল সিসিভ করেননি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলীমুজ্জামান মিলনও ফোনে জানতে চাওয়া পর সংযোগ কেটে দেন। এ ঘটনার বিষয়ে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা বলেছেন, তিনি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখবেন।
স্থানীয়দের অভিমত, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা অত্যাবশ্যক। যাতে সরকারি সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং সরকারি দপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না হয়।