শেবাচিমে নেই করোনার ওষুধ, ফার্মেসীতে চড়া মূল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: শনিবার ২৪শে এপ্রিল ২০২১ ১০:২৯ পূর্বাহ্ন
শেবাচিমে নেই করোনার ওষুধ, ফার্মেসীতে চড়া মূল্য

করোনা আক্রান্ত রোগী যতদিন সংক্রমনমুক্ত না হন ততোদিন তাদের চিকিৎসায় অন্যতম দুটি ইনজেকশন এন্টিভাইরাল রেমডেসিভার ও এন্টিবায়োটিক মেরোপেন দিতে হয়। কিন্তু বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ দুটি ইনজেকশন সাপ্লাই নেই। ফলে এ দুটি ইনজেকশনের জন্য ছুটতে হচ্ছে ফার্মেসীতে।


ইনজেকশন সংকটের কথা জানতে পেরে হাসপাতালের সামনের ফার্মেসীগুলোতে দ্বিগুন দামে বিক্রি করছেন গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি ইনজেকশন। ফলে বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। আর ফার্মেসী মালিকদের দাবী, ওই ইনজেকশন সাপ্লাইকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদামতো সাপ্লাই দিতে না পারায় তারাও বেশি দামে ক্রয় করেছেন।


এদিকে এন্টিভাইরাল রেমডেসিভার ও এন্টিবায়োটিক মেরোপেন ইনজেকশনের চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম।


চিকিৎসকদের মতে, যতদিন পর্যন্ত রোগী সংক্রমনমুক্ত না হন ততদিন দুটি ওষুধের মধ্যে একটি দিনে তিনবার ও আরেকটি একবার রোগীর শরীরে প্রয়োগ করতে হয়। করোনা প্রতিরোধী এই এন্টিভাইরাল ওষুধ সাধারণত সরকারিভাবে বিনামূল্যে করোনা সংক্রমিতদের দেয়া হয়।


জানা গেছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় এক সপ্তাহ আগে করোনা চিকিৎসার ওষুধ দুটির সরবারহ শেষ হয়ে যায়। এরপরই চিকিৎসকরা বাইরে থেকে ওষুধ দুটি কিনতে বলছেন রোগীদের। আর এ সুযোগে কয়েকগুন দাম বাড়িয়ে তা বিক্রি করছেন ফার্মেসী মালিকগণ।


এ নিয়ে ফার্মেসীগুলোতে একটি সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালের সামনের ফার্মেসীসহ গোটা নগরীর ফার্মেসীগুলোতে ইচ্ছেমত দাম আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বজন জানান, তার ভাইয়ের চিকিৎসায় প্রতি ২৪ ঘন্টায় তিনটি মেরোপেন এবং একটি রেমডেসিভার ইনজেকশন পুশ করতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে এই ওষুধ না দেয়ায় সামনের ফার্মেসী থেকে রেমডেসিভার ইনজেকশন সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা


আর এন্টিবায়োটিক মেরোপেন ইনজেকশন ১৩শ থেকে দেড় হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে তাকে। যদিও এন্টিভাইরাল রেমডেসিভার ইনজেকশন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফার্মেসিগুলোতে পাইকারী সর্বনিম্ন ১৮শ থেকে ২২ শ’ টাকায় আর এন্টিবায়োটিক মেরোপেন ইনজেকশন ৬শ’ থেকে ৮শ টাকায় সরবারহ করছে বলে জানা যায়।


আরেক রোগীর স্বজন মাহামুদ হাসান জানান, ওষুধের দাম এক এক দোকানে এক এক ভাবে রাখা হচ্ছে। পাঁচ দিন ধরে বিভিন্ন দামে একই ওষুধ কিনতে গিয়ে সর্বস্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের। তবুও রোগী বাঁচাতে ফার্মেসীর ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।


শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য সংরক্ষক জে. খান স্বপন জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ ইউনিটে ১২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যারমধ্যে ৭৭ জন করোনা পজেটিভ। ২৪ ঘন্টায় ৮ জন ভর্তি হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ জন।


বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস জানিয়েছেন, সংক্রমনের পর থেকে বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৩৯৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৪৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের চিকিৎসা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে হয়েছে।


তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ পূর্বেও করোনা ইউনিটে ভর্তি হওয়া আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ দুটি বিনামূল্যে সরবারহ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে ওষুধ সরবারহ না থাকায় রোগীদের বাইরে থেকেই কিনতে হচ্ছে।


হাসপাতালের সামনের ফার্মেসী ঘুরে জানা গেছে, হঠাৎ করে সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা লিমিটেড এন্টিভাইরাল এই ইনজেকশন দুটি চাহিদামতো দোকানে দিতে পারছেন না। 


এন্টিভাইরাল ইনজেকশন এবং এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দুটি শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন ওষুধ সরবরাহের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। “পাশাপাশি যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ইনজেকশন সরবরাহ দেয়া হয় সে বিষয়ে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করছি”।


বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ইনজেকশন দুটি যাতে দ্রুত সরবরাহ করা হয় সে বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে। তাছাড়া ফার্মেসিগুলোতে করোনা সংকটকে পুঁজি করে ওষুধের বাড়তি দাম রাখা হলে সে বিষয়টি আমরা তদারকি করে দেখবো। আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। আর এ ধরনের অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষনিক জেলা প্রশাসনকে অবহিত করার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।