মহিপুরে বেড়িবাঁধের মাটিকাটার প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষককে মারধর

নিজস্ব প্রতিবেদক
আনোয়ার হোসেন আনু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫৫ অপরাহ্ন
মহিপুরে বেড়িবাঁধের মাটিকাটার প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষককে মারধর

স্কুলের সামনে বেরীবাধের ঢালের মাটি কাটতে বাধা দেওয়ায় থানা শ্রমিক লীগ নেতা কর্তৃক হামলার শিকার হয়েছে পটুয়াখালীর  মহিপুর থানাধীন লতাচাপলী ইউনিয়নের হাতেমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জি এম নজরুল ইসলাম (৫৯)। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে শিক্ষক নজরুল ইসলাম। আহত ওই শিক্ষককে কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেছে কর্তব্যরত চিকিৎসক। 


 মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।এ ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার জন্য নজরুল ইসলামের পরিবার মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেন ও তার লোকজনকে দায়ী করেছেন। তবে শ্রমিক লীগ নেতা দাবী করেছেন প্রধান শিক্ষক জি এম নজরুল ইসলাম তার লোকজনকে মারধর করেছেন। এসময় তিনি উপস্থিত থেকে ভিডিও ধারণ করেছেন।  


জি এম নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহিপুর থানা শাখার জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি। তাঁর পরিবার জানায়, তিনি ২০১৬ সাল থেকে ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি বেশ কয়েকবার ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন। 


শিক্ষক জি এম নজরুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিস বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীকে মারধর করার দৃশ্য দূর থেকে দেখে এগিয়ে আসলে আমাকেও শ্রমিকলীগ নেতা জামাল হোসেনের লোকেরা মারধর করেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নজরুল ইসলাম আলীপুরের বাসা থেকে নিজের কর্মস্থল হাতেমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছেছিলেন। 


এ সময় তাঁর বাসার সামনে বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধের ঢালের নিচ থেকে কয়েকজন মিলে এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় তিনি প্রতিবাদ করেন এবং নিজের মুঠোফোন দিয়ে মাটি কাটার দৃশ্যের ছবি তুলেন। এতে মাটি কাটার সাথে জড়িতরা উত্তেজিত হয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা এলোপাথাড়ি লাথি-কিল ঘুষি মারে। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। 


হামলাকারীরা তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। স্বামীকে মারধর করার দৃশ্য দেখে স্ত্রী নার্গিস বেগম এগিয়ে আসলে তাঁকেও জামাল হোসেনের লোকেরা মারধর করে বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জি এম নজরুল ইসলামকে উদ্ধার করে কুয়াকাটার ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন। 


ঘটনার দুই ঘন্টায় তাঁর জ্ঞান না ফেরায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত টিকিৎসক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন। বর্তমানে তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। 


কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক আশিকুর রহমান বলেন, ‘তাঁর শরীরের ওপরের দিকে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তবে সে চাপা মার খেয়েছে। কিল-ঘুষির কারণে তিনি অচেতন হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী। তাঁর জ্ঞান না ফেরায় আমরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’


মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা বাঁধের কাজের জন্য মাটি কাটতে ছিলাম। এ নিয়ে তাঁর আপত্তি করার কিছু নেই। তিনি হঠাৎ করে এসে ছবি তুলছিলেন এবং গালিগালাজ করছেন। আমার লোকজন প্রতিবাধ করলে তিনি তাদের মারধর করেন। আমি উপস্থিত থেকে ভিডিও ধারণ করেছি এবং আমার লোক তার গায়ে হাত দেয়নি। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ রোগি বিধায় আমার লোকজনকে মারধর করতে গিয়ে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পরেছেন।’ 


বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কলাপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল আলম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালের নিচ থেকে গভীর করে প্রভাশালীরা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে দেখে প্রধান শিক্ষক প্রতিবাদ করেন। এরপর মাটি কাটার দৃশ্য নিজের মুঠোফোন থেকে ধারণ করেন। এতে প্রধান শিক্ষকের কোনো অন্যায় হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা মনে করি, প্রধান শিক্ষক সামাজিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন। উল্টো সন্ত্রাসীরা তাঁকে মারধর করে আহত করেছেন। আমরা এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।


মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মো.আবুল খায়ের বলেন, শিক্ষককে মারধরের খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। শিক্ষকের পরিবার অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।