প্রকাশ: ৮ আগস্ট ২০২৫, ১৮:২২
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির ফলে ভারতের পোশাক খাত বড় ধরনের আঘাত পেল। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে ভারতীয় পোশাক পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা মার্কিন ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাবে গ্যাপ, কোল’স সহ বহু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন অন্য দেশে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে, যেখানে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও গুয়াতেমালা অন্তর্ভুক্ত।
পার্ল গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পল্লব ব্যানার্জি জানান, মার্কিন ক্রেতারা ইতিমধ্যেই উৎপাদন ভারতে না রেখে বিকল্প দেশে স্থানান্তর করতে চাপ দিচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত ভারতের পোশাক রপ্তানি বাজারে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে পূর্বে শুল্ক হার কম ছিল এবং ভারতের জন্য সুযোগের পথ সুগম করেছিল।
শুল্ক বৃদ্ধির কারণে অনেক ক্রেতা ভারত থেকে উৎপাদন সরিয়ে ইথিওপিয়া ও নেপালের মতো নতুন উৎপাদন কেন্দ্র খোঁজার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রিচাকো এক্সপোর্টসের মহাব্যবস্থাপক দিনেশ রহেজা বলেন, বর্তমানে পোশাক খাতে সংকট দেখা দিয়েছে এবং তারা নেপালের কাঠমান্ডুতে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।
টাইটান এবং রেমন্ডের মতো বড় প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোও মার্কিন বাজারে শুল্ক সুবিধা বজায় রাখতে উৎপাদন কিছু অংশ মধ্যপ্রাচ্যে ও ইথিওপিয়ায় স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রেমন্ডের অর্থ বিভাগের প্রধান অমিত আগরওয়াল জানান, ইথিওপিয়ায় মার্কিন শুল্ক মাত্র ১০ শতাংশ, তাই তারা সেখানে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
তামিল নাড়ুর তিরুপপুর, যা ভারতের নিটওয়্যার রাজধানী হিসেবে পরিচিত, এই সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এখানকার অনেক কারখানায় অর্ডার স্থগিত রাখার নির্দেশ এসেছে। কটন ব্লসম ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক নবীন মাইকেল জন জানান, ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ভারতের পোশাক খাত শ্রমিক সংকট ও সীমিত উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যেই এই শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব সামলাতে হচ্ছে, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের জন্যও বড় ধাক্কা। রপ্তানিকারকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, যদি উৎপাদন ভারতের বাইরে চলে যায়, তাহলে দেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নতুন শুল্ক নীতি ভারতের জন্য ঝুঁকি বহন করছে, বিশেষ করে যখন বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো কম শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে। তাই ভারতকে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে।