প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:৫২
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আর দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অসন্তোষের কারণে তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী কাঠমান্ডুর পার্লামেন্ট ভবনের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাণ্ডব চালায়। তারা সড়ক অবরোধ, রাস্তায় জ্বালানী পোড়ানো এবং সরকারি ভবনে ভাঙচুরসহ বিভিন্ন সহিংস কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমন করতে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করেছে। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ জারি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ জন। এছাড়া, আহত হয়েছেন ২০০-এর বেশি বিক্ষোভকারী।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সকল হাসপাতালে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের পরও বিক্ষোভ থেমে যায়নি। পার্লামেন্টের কাছে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে নেপাল সেনাবাহিনীর ২ থেকে ৩টি প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কাঠমান্ডু এলাকায় সীমাবদ্ধ।
বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন কানতিপুর টেলিভিশনের সাংবাদিক শ্রেষ্ঠা। এ ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক শুরু করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।
নেপাল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে দেশটিতে নিবন্ধন করতে, অফিস স্থাপন করতে এবং একজন অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে বলেছিল। নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ায় অধিকাংশ প্ল্যাটফর্ম সরকারের শর্ত না মানায় ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, এক্স, রেডিট, লিংকডইনসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করা শুধু ট্রিগার হিসেবে কাজ করেছে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সঙ্গে মিলিত হয়ে এই বিক্ষোভকে বৃহৎ আন্দোলনে পরিণত করেছে।
নেপালের এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মানবাধিকার ও গণমাধ্যম স্বাধীনতার ওপর বিরূপ প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এভাবে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে, যা দেশটির তরুণ সমাজের মধ্যে অসন্তোষ এবং ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ধরা যাচ্ছে।