রবি ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে নেই আনুষ্ঠানিকতা !

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার ৬ই আগস্ট ২০২১ ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
রবি ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে নেই আনুষ্ঠানিকতা !

বাঙ্গালীর মনন-চিন্তা,চেতনার সাথে নিবিরভাবে মিশে থাকা এক নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্ব শিল্প সাহিত্যের উজ্বলতম এ নক্ষত্রের প্রয়ানের ৮০বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় হয়তো জুমেছে ধুলোর আস্থরণ কিন্তু তবুও যেন সামান্যটুকু মলিন হয়নি তার সৃষ্টি –কর্মের আবেদন। বছর ঘুরে আবারো  এলো ২২শে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম মহাপ্রয়াণ দিবস কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাস থামিয়ে দিয়েছে প্রয়াণ দিবসের আয়োজন।




যেখানে কবি গুরুর জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে সেই নওগাঁর আত্রাইয়ের পতিসর কাচারী বাড়িতে নেই কোনও কোলাহল কিংবা কোনও ধরনের আনুষ্ঠানিকতা। নিরব হয়ে রয়েছে কাচারী বাড়ি। করোনার কারনে বন্ধ রয়েছে সর্বসাধারনের প্রবেশ। করোনা ভাইরাসের কারনে রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত কাচারী বাড়িতে প্রয়াণ দিবসকে ঘিরে নেই কোন আনুষ্ঠানিকতা। এমনকি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন থেকে ভার্চুয়ালিও কোন ধরনের আয়োজন করা হয়নি।




পতিসরের ছায়াঘেরা পরিবেশ এবং পাশের নাগর নদী রবীন্দ্রনাথকে মুগ্ধ করে রেখেছিল। আর তা ফুটে উঠেছে অসংখ্য সাহিত্য ও রচনাবলীতে। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাংলাদেশে শিলাইদহ, শাহাজাদপুর ও কালিগ্রাম পরগনাসহ মোট তিনটি জমিদারি ছিল। ভাগবাটোয়ারা সূত্রে রবীন্দ্রনাথের ভাগে পড়ে কালিগ্রাম পরগনা। 



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে পতিসর আসেন ১৮৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সালের ১৩ জানুয়ারী শাহাজাদপুর হতে পতিসর অভিমুখে রওনা হয়ে ১৬ জানুয়ারী পতিসর পৌঁছান। পতিসর থেকে স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে পত্রে লেখেন‘‘আজ আমি কালীগ্রামে এসে পৌঁছালুম, তিন দিন সময় লাগল।’’ 



কালিগ্রাম স্টেটের কাচারীবাড়ী ছিল পতিসরে। কাচারীবাড়িটি নাগর নদীর তীরে অবস্থিত। কাচারীবাড়ীটি নির্মাণের পর ১৯৯১ সালে সংস্কার করা হয়। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত অনেক নিদর্শন রয়েছে। কাচারী বাড়ীটির পাশেই রয়েছে দেবেন্দ্র মঞ্চ ও রবীন্দ্র সরোবর। 



স্থানীয় রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রাহক এম মতিউর রহমান মামুন বলেন, আত্রাই উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এটি উপজেলার পতিসর নামের গ্রামে নাগর নদীর তীরে অবস্থিত। 



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ ও জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি কেনার পর ১৮৯১ সালে রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার জন্য এ অঞ্চলে আসেন। এই কাচারিতে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কিছু কাব্য, গল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেন। এই স্থানের চার পাশে রবি ঠাকুরের পরিবার কর্তৃক স্থাপিত বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে। 



এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ একটি বিদ্যালয় (কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন), দাতব্য হাসপাতাল ও পুরনো একটি কৃষি ব্যাংক, যা ১৯০৫ সালে স্থাপিত হয়েছিল। এ ছাড়াও তিনি এখানে গড়ে তুলেছিলেন মৃৎশিল্প।




তিনি বলেন, সরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল প্রাপ্তির পর সর্বশেষ ১৯৩৭ সালে পতিসরে আসেন। বর্তমানে এখানে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পতিসরের স্থাপনাগুলো দেখতে অনেকটাই শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের একই পরিবার কর্তৃক স্থাপিত স্থাপনাগুলোর মতোই। 



এখানে একটি দুই তলা কুঠিবাড়ি রয়েছে। এ ছাড়াও কুঠিবাড়ি ঘিরে বেশ কিছু ভবন রয়েছে, যেগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। কাচারি বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। আগে পুকুরটি বেশ বড় থাকলেও কালক্রমে মাটি ভরাট হয়ে এর আকার ছোট হয়ে গেছে।




মূল ভবনের সামনেই রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আবক্ষ মূর্তি। এ ছাড়াও ভবনে প্রবেশের জন্য রয়েছে নান্দনিক একটি প্রবেশপথ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে পতিসর 



কাচারীবাড়িতে ২০২০সাল থেকে কোন ধরনের আয়োজন নেই। অনেকটা নিরবেই কেটে প্রিয় এই কবির জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস। আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম মহাপ্রয়াণ দিবস। কিন্তু মহামারি করোনা থামিয়ে দিয়েছে প্রয়াণ দিবসের সকল আয়োজন। 


ভার্চুয়ালি কোন আয়োজন করা হয়নি স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে। তবে অন্তত ভার্চুয়ালি কিছু আয়োজন করা যেত। যাতে করে প্রিয় কবিকে নিয়ে কিছু বলা যেত,স্মরণ করা যেত আনুষ্ঠনিকভাবে।



নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক এবিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলা সাহিত্যের এমন কোন স্থান নেই যেখানে রবি ঠাকুরের স্পর্শ নেই। কবি গুরুর অনেক স্মৃতিমাখা স্থান আত্রাইয়ের কাচারীবাড়ি। অনেকটা সময় তিনি এখানে কাটিয়েছেন । অনেক সাহিত্য ও রচনা ও কবিতা তিনি এখানে থাকাকালীন সময়ে লিখেছেন।



 করোনার কারনে কি তার প্রয়াণ দিবস বন্ধ থাকবে। ভার্চুয়ালি তো আয়োজন করা যেত। সেটাও শুনলাম স্থানীয় ভাবে করা হচ্ছেনা। যা দু:খজনক। শুধু মুখে নয় রবিন্দ্র প্রেম অন্তরেও ধারণ করা উচিত।




পতিসর কাচারী বাড়ির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ( কাম-কম্পিউটার অপারেটর ) আবুল কালাম হোসেন জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে গত বছরের মার্চ মাস থেকে কাচারী বাড়িতে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে সর্বসাধারণের জন্য। 



এছাড়া প্রতি বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস পালন করা হলেও গতবছর থেকে তা বন্ধ আছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে এখানে নেই কোন আয়োজন।




আত্রাই উপজেলা নিবার্হী অফিসার ( ইউএন) মোঃ ইকতেখারুল ইসলাম জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম মহাপ্রয়াণ দিবসের সকল আয়োজন বন্ধ আছে। ভার্চুয়ালিও কোন আয়োজন নেই। আমরা আশা করছি আগামী বছর বড় পরিসরে কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস পালন করা হবে।