শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সৌরভ নূর , বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:১০ অপরাহ্ন
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ

রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কর্তৃক আলোচিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার দুই সন্তান নতুন শহরের বিভিন্ন সেক্টরে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। 


সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে এই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ২০২২ সালে এই প্লটগুলো তাদের নামে বরাদ্দ হয়, কিন্তু বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয়তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে রাজউকের একেবারে ভেতরের কয়েকজন ছাড়া অন্যরা এ ব্যাপারে তেমন কিছুই জানতেন না। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রত্যেককে ১০ কাঠা আয়তনের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 


হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্লট বরাদ্দের ফাইল রাজউকের রেকর্ড শাখা থেকে সরিয়ে অন্যত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, যা রাজউকের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। সম্প্রতি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির মুখে এ সংক্রান্ত ৬টি ফাইল পুনরায় রেকর্ডরুমে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমানে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্য পূর্বাচল প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের বিশদ তথ্য:


- **শেখ হাসিনা**: পূর্বাচলের কূটনৈতিক জোন ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠার প্লট (নম্বর ০০৯) বরাদ্দ পেয়েছেন। বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ৩ আগস্ট ইস্যু করা হয়।

- **সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়)**: ১০ কাঠার প্লট নম্বর ০১৫, বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর।

- **সায়মা ওয়াজেদ পুতুল**: ১০ কাঠার প্লট নম্বর ০১৭, বরাদ্দপত্র ২ নভেম্বর।

- **শেখ রেহানা**: পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট নম্বর ০১৩।

- **শেখ রেহানার ছেলে**: রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১১।

- **শেখ রেহানার মেয়ে**: আজমিনা সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১৯।


প্লটের সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোনের মধ্যভাগে বিস্তৃত এলাকা উঁচু সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এ অঞ্চলে নারিকেল, সুপারি, আম ও জাম গাছের পাশাপাশি শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে। পূর্বাচল প্রকল্পের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ রাজউকের প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে এবং নিরাপত্তার জন্য সেখানে একটি লোহার গেট লাগানো হয়েছে।


সরকারি প্লট বরাদ্দের এই গোপনীয়তা নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিতর্ক চলমান রয়েছে। রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান এবং তৎকালীন স্টেট ও ভূমি শাখার পরিচালক নুরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে প্লট বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন হয়। এই বিষয়টি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেন, এটি স্পষ্টভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার। 


তিনি বলেন, "যারা বৈষম্যমূলকভাবে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, তাদের দায় এড়ানো যাবে না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত এবং সমাজের সর্বত্র ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে।"


প্লট বরাদ্দের এই ঘটনায় রাজউকের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরোধ ও বিতর্ক চলছে এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক ব্যবস্থাপনার দাবি উঠেছে।