প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৪২
হাইকোর্ট ‘ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২’-এর ১১ ধারায় সরকারকে প্রদত্ত ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা বহাল রাখার রায় ঘোষণা করেছে। ১৯৯৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭৩৯টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে গেজেট জারি করেছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে একটি সার্কুলারের মাধ্যমে সরকার সেই ক্ষমতা সীমিত করে মাত্র ১১৭টি ওষুধের জন্য রাখে, বাকিটা উৎপাদনকারীদের হাতে ছেড়ে দেয়।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০১৮ সালে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করে। তারা যুক্তি দেন যে, সার্কুলারটি দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থের প্রতি ক্ষতিকর এবং অযথা মূল্যনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উৎপাদনকারীদের হাতে দিয়ে সরকার কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণহীনতা সৃষ্টি করেছে।
মোট পাঁচ বছর ধরে মামলার দীর্ঘ শুনানির পর সোমবার বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়ে বলা হয়েছে, দেশের অধিকাংশ ওষুধের দাম পুনরায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে। এতে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ডিজি ড্রাগ, ওষুধ মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের জানান, ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সরকারকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে নির্ধারিত ৭৩৯টি ওষুধের দামও তখন গেজেট প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরের বছরের সার্কুলারে ক্ষমতা সীমিত করা হলে উৎপাদনকারীরা দাম নির্ধারণে স্বাধীন হয়ে যায়।
হাইকোর্টের এই রায়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে বলে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “জনস্বার্থে নেওয়া এই রায় ওষুধের দাম যথাযথ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।”
এ রায়ের ফলে দেশের ওষুধের বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রয়োগ হবে। উৎপাদনকারীরা আর একা দাম নির্ধারণ করতে পারবে না। এটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে জনগণের জন্য সাশ্রয়ী ওষুধ প্রাপ্তিতে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাইকোর্টের এই রায় স্বাস্থ্য খাতে ন্যায্যতা এবং জনগণের সুবিধা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে বাজারে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।