আ.লীগ নেতার মুক্তির দাবিতে পোস্টারিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ১৯শে জুন ২০১৯ ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন
আ.লীগ নেতার মুক্তির দাবিতে পোস্টারিং

সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের মুক্তির দাবিতে পোস্টারে সয়লাব সোনাগাজীসহ ফেনীর আদালত পাড়া এলাকা। উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে এসব পোস্টার সাঁটানো হলেও এর সাথে দলীয় কোন সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ‘সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জনাব রুহুল আমিন ভাই এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি চাই’- লেখা সংবলিত পোস্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছবি ছাপা হয়েছে।

সোমবার রাত থেকে এসব পোস্টার উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ জেলার আদালতপাড়া এলাকায় সাঁটানো হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রধান কার্যালয়েও এসব পোস্টার সাঁটানো হয়েছে বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এদিকে রুহুল আমিনের মুক্তির দাবিতে পোস্টার সাঁটানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন হত্যা মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। তিনি বলেন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যে ১৬ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছেন তাতে রুহুল আমিনের নাম আছে। এ ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে ন্যায় বিচার ব্যাহত হবে বলে জানান তিনি। উপজেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মফিজুল হক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ভূট্টো জানান, এ ধরনের পোস্টার সাঁটানোর বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগের কোন সম্পর্ক নেই এমনকি কাউকে এ বিষয়ে কোন দায়িত্ব প্রদান করা হয়নি।

এর ব্যাপারে জেলা আ.লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম জানান, রুহুল আমিনের মুক্তির দাবিতে পোস্টার সাঁটানোর সাথে জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কোন সম্পর্ক নেই। কে বা কারা এটি করেছে এ সম্পর্কে অবগত নন বলেও জানান তিনি। এর আগে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে ৩০ মে রুহুল আমিনসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চেয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

চার্জশিটে রুহুল আমিন ছাড়াও সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২) ও মাদ্রাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

এ মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি। এ ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারভুক্ত ৮ আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১জনকে  গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।

ইনিউজ ৭১/এম.আর