ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই মেলার উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা ইয়াসমিনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) মেলার মাঠে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ৩২ একর জমির ওপর নতুন রূপে সাজানো হয়েছে এবারের বাণিজ্য মেলা। মেলার প্রধান গেট সাজানো হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে, সঙ্গে থাকবে পদ্মা সেতুর মডেল। মেলায় আগত দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারী এবং দর্শনার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, খোলামেলা পরিসরে গতবছরের তুলনায় এবার স্টলের সংখ্যা কমানো হয়েছে। গত বছর মোট ৬৩০টি ছোট-বড় স্টল কমিয়ে এবার করা হয়েছে ৪৮৩টি। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভেলিয়ন ১১২টি, মিনি প্যাভেলিয়ন ১২৮টি এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল ২৪৩টি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশের রফতানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। ২০২৭ সালের পর বাংলাদেশ আর এলডিসি দেশের সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। সেজন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ববাজারের চাহিদা বৃদ্ধিতে এই খাতে নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। এ সময় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টি করুন। উইন-উইন পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমার আহ্বান।’ ‘‘আমরা আইসিটি সেক্টরটাকে সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলছি। পাটের জিন আমরা আবিষ্কার করেছি। বেসরকারি খাত বা অন্য কোনো খাতে যারা বিনিয়োগ করতে চান; তাদেরকে আহ্বান জানাই।’’ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আলু, চিংড়ি আর আম উৎপাদন করছি। হস্তশিল্পের ওপর বিশেষভাবে নজর দিচ্ছি।’
‘‘আমরা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য তৈরিতে লেদ ও মিলিং মেশিন অপারেশন, ওয়েল্ডিং, ক্যাড-ক্যাম ডিজাইন, সিএনসি অপারেশন, ইলেকট্রিক্যাল, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’’ একটা দেশকে উন্নত করতে হলে শিল্প পর্যায়ে উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলদেশ মন্দা কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সকল উন্নয়নের লক্ষ্য তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন করা। দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।’’
‘‘আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোকে আগ্রাধিকার দেওয়া। দেশে যাতে বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেদিকে নজর দেওয়া। এরই মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা তৈরি করছি। আমাদের পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’’ নিজের সরকারকে ব্যবসা-বান্ধব সরকার হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা ব্যবসা করি না, কিন্তু আমরা ব্যবসা-বান্ধব সরকার। ব্যবসা যাতে সহজ হয় টাস্কফোর্স তৈরি করেছি। আমরা রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছি।’
আগামী বছর রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে বাণিজ্যমেলা স্থানান্তরের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্যমেলা যাতে আরও আধুনিকরণে আমরা আগামী বছর ঢাকার পূর্বাঞ্চলে মেলা স্থানান্তর করব।’
এবারের মেলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৮৩টি প্যাভিলিয়ন ও স্টল থাকবে। দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য মেলা প্রাঙ্গণ প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এবারের মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন রাখা হয়েছে ৬৪টি। সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৩টি, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ৫৯টি এবং প্রিমিয়াম মিনি প্যাভিলিয়ন ৪২টি।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।