চাকরি হারিয়ে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২৭শে জুন ২০২০ ১২:৫৭ অপরাহ্ন
চাকরি হারিয়ে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ

মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে সমগ্র বিশ্বে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। কারো আবার কমে গেছে বেতন, কারো বন্ধ হয়েছে ব্যবসা। সর্বোপরি চরম এক অনিশ্চয়তা ভর করেছে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জীবনে। জীবনধারণে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান সৃষ্টি করতে না পারার গ্লানি নিয়ে তারাই এখন রাজধানী ছেড়ে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামে ফিরতে।ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে রাজধানী ছেড়ে গ্রামমুখী মানুষের অসংখ্য চিত্র শুক্রবারও (২৬ জুন) দেখা যায়। ভাগ্য বিড়ম্বিত এসব ভুক্তভোগীর অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবার গ্রামে ফিরে যাওয়ার কারণ প্রায় একইরকম।

সাভারে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করা গৌতম কুমার শীল একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে প্রথম মাসে তাকে অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়। তার পরের মাসে অর্ধেকের অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়। এই টাকায় বাড়িভাড়া দেওয়ার পর পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছিল। ধার-দেনা করে এতদিন চললেও এখন পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তাই গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর বেলগাছিতে ফিরে যাচ্ছেন।

ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে বসবাস করতেন আশরাফ হোসেন। একটি কোম্পানিতে করতেন চালকের কাজ। এখন তার কাজ পুরোটাই বন্ধ। প্রতিমাসে ১১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু এখন সেই পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা প্রায় অসাধ্য হয়ে গেছে। তাই তিনিও পরিবার নিয়ে ফরিদপুরের আটরশিতে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। গ্রামে থাকলে প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়ার টাকা নিয়ে অন্তত দুশ্চিন্তা করতে হবে না।ট্রাকে মালপত্র নিয়ে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ।আবার কবে ঢাকায় ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কবে ফিরবো কিংবা আদৌ ফিরতে পারবো কিনা সেটাও জানি না। 

এসময় চোখ ঝাপসা হয়ে না উঠলেও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আশরাফ হোসেন। মুখমণ্ডলে তার ভেসে ওঠে এক অনিশ্চয়তার ছাপ।শুধু গৌতম কিংবা আশরাফ নয়, এমন আরও শত শত মানুষকে ঘাট এলাকায় ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে চরম হতাশা আর অভাবের মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে। আর সেই অভাব থেকে কিছুটা হলেও মুক্তির আশায় গ্রামমুখী হচ্ছেন।

এদিকে বছরের মাঝখানে রাজধানী ছাড়ায় তাদের সন্তানদের লেখাপড়াও অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে যাচ্ছে। গ্রামে গিয়ে কোনো স্কুলে ভর্তি হতে গেলেও অন্তত আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শহরে বেড়ে ওঠা এসব বাচ্চারা গ্রামের পরিবেশে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারবে, সেটাও ভাবিয়ে তুলছে তাদের।

পাটুরিয়া ঘাটে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. গোলজার হোসেন বলেন, আমি ছোট-বড় পিকআপ এবং ট্রাক মিলে ৫০টির বেশি গাড়ি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুট পার হতে দেখেছি। অনেক গাড়ি এখনও টিকিট কেটে নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে। করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।