ছাত্রলীগ-যুবলীগের অপকর্মে সমালোচনা হচ্ছে সরকারের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সোমবার ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:৩০ অপরাহ্ন
ছাত্রলীগ-যুবলীগের অপকর্মে সমালোচনা হচ্ছে সরকারের

কোনো কিছুতেই থামছে না ছাত্রলীগ-যুবলীগ। ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ক্যাসিনো, জুয়া, চাঁদাবাজি, জমি দখল, নারী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি আর নির্মাণকাজ থেকে কমিশন দাবিসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ এ দুই সংগঠনের একশ্রেণির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে, যুবলীগ-ছাত্রলীগে পাপিয়াদের সংখ্যা কম নয়। সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রয়েছেন অসংখ্য বিতর্কিত নেতাকর্মী। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সরকারের ব্যাপক অর্জনের মধ্যেও সমালোচনা হচ্ছে। বিতর্কিত এসব নেতার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন একশ্রেণির সংসদ সদস্য।

এ কারণে তাদের দাপট অনেক বেশি। স্থানীয় থানা ও প্রশাসন যুবলীগ-ছাত্রলীগের এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না। কোনো কোনো কর্মকর্তা ব্যবস্থা নিতে গেলে ঐ কর্মকর্তাকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা বলে বদলিসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। সরকারের সমালোচনা ঠেকাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মীরা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ক্যাসিনো, জুয়া, অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান এতদিন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। একে একে সব বিতর্কিত নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

যুব মহিলা লীগের পদ বাগিয়ে অভিজাত এলাকায় জমজমাট নারী ব্যবসাসহ ভয়ংকর সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। নিজেকে পরিচয় দিতেন ক্ষমতাধর রাঘববোয়ালদের কর্মী হিসেবে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে নেতাদের ফুল দিয়ে সেই ছবিরও অপব্যবহার করতেন তার সব খারাপ কাজে। শুধু গত এক মাসেই এই নারী রাজধানীর অভিজাত এক পাঁচতারকা হোটেলে বিশাল অঙ্কের বিল পরিশোধ করেছেন। আর এই অর্থ খরচের কারণেই গোয়েন্দাদের চোখ পড়ে পাপিয়ার ওপর। একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে তার সব অপকর্মের কাহিনি। সব পাঁচতারকা হোটেলেই ছিল পাপিয়ার এসকর্ট ব্যবসা। আলোচিত নারী পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। সর্বশেষ প্রচার করতেন সংরক্ষিত এমপি পদ পাচ্ছেন। কিন্তু তা না পেলেও থেমে ছিল না তার অপরাধমূলক কাজকর্ম।

পাপিয়ার মতো ছাত্রলীগ ও যুবলীগে একশ্রেণির অসংখ্য নেতা আছেন, যারা নানা অপকর্মে জড়িত। বর্তমান সরকার এত উন্নয়ন করেছে, যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু গুটি কয়েক নেতার অপকর্মে এসব অর্জন ম্লান হচ্ছে। ছিনতাই করার সময় পুলিশের কাছে হাতেনাতে আটক হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই নেতা।

শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে হাইকোর্ট মোড় এলাকা থেকে তাদের আটক করে শাহবাগ থানার পুলিশ। এরপর ছিনতাইয়ের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধ মামলা দায়ের করেন সোহেল নামে এক ট্রাকচালক। আটক হওয়া দুজন ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ শান্ত এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আল আমিন। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। খুলনায় মহানগর যুবলীগের শীর্ষ এক নেতা একটি পরিবারের ৮ কোটি টাকার সম্পত্তি দুই বছর ধরে ভোগদখল করছেন। সম্পত্তির প্রকৃত মালিক এখন পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটাচ্ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ।

প্রায় ১১ বছর ধরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ মূলত আলোচনায় এসেছে ইয়াবা ব্যবসা, হত্যা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, ছিনতাই কিংবা টেন্ডারবাজির কারণে। একইভাবে মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যা করে আবারও শিরোনামে এসেছে ছাত্রলীগ। ভালো কাজের জন্য ছাত্রলীগ-যুবলীগ গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে এমন নজির নিকট অতীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকটি নিষ্ঠুর ও নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছাত্রলীগের নাম। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে ছাত্রলীগের নিজেদের কোন্দলে নিহত হন ৪৫ জন। আর এই সময়ে ছাত্রলীগের হাতে প্রাণ হারান অন্য সংগঠনের ১৮ জন।

২০০৯ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আসাদ ওরফে রাজীবকে হত্যা করে লাশ বহুতল ভবন থেকে ফেলে দেওয়া হয়। ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে নিজ সংগঠনের কর্মীরাই মারধর করে বহুতল ভবন থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করেন। ২০১০ সালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আবুবকর সিদ্দিক। একই বছর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ। ২০১২ সালে ছাত্রলীগের নেতাদের চাপাতির কোপে প্রাণ হারান পুরান ঢাকার দরজি বিশ্বজিত্ দাস। গত বছর ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে যুবলীগের অনেক নেতাকর্মীর নাম চলে এসেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ কারাগারেও আছেন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর