দুনিয়ার কথা না ভেবে পরকালকে স্মরণ করবেন কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ১৭ই জুন ২০২৩ ১১:১১ পূর্বাহ্ন
দুনিয়ার কথা না ভেবে পরকালকে স্মরণ করবেন কেন?

যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে চিন্তামগ্ন থাকে, আল্লাহ তার দুনিয়াবি সকল চিন্তার দায়িত্ব নিয়ে নেন। আর যে মিছে দুনিয়ায় মোহাচ্ছন্ন হয়ে রবের সৃষ্টি দুনিয়াতেই রবকে ভুলে যায়, আল্লাহ তার উপর থেকে তাঁর দায়িত্ব উঠিয়ে নেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-


وَ لَلۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ لَّکَ مِنَ الۡاُوۡلٰی

‘আর অবশ্যই পরকাল তোমার জন্য ইহকাল (দুনিয়া) অপেক্ষা শ্রেয়।’ (সুরা দোহা: আয়াত ৪)


এ আয়াতে الآخِرَة এবং الْأُولَىٰ শব্দদুটির প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে- আখেরাত ও দুনিয়া। এ দুটি অর্থ নেওয়া হলে এর ব্যাখ্যা হবে যে, আমি আপনাকে আখেরাতে নেয়ামত দান করারও ওয়াদা দিচ্ছি। সেখানে আপনাকে দুনিয়া অপেক্ষা অনেক বেশি নেয়ামত দান করা হবে। (ইবন কাসির)


আয়াতের আরেকটি ব্যাখ্যা এভাবে এসেছে, এখানে الآخِرَة কে শাব্দিক অর্থে নেয়াও অসম্ভব নয়। অতএব, এর অর্থ পরবর্তী অবস্থা; যেমন الْأُولَىٰ শব্দের অর্থ প্রথম অবস্থা। তখন আয়াতের অর্থ এই যে, আপনার প্রতি আল্লাহর নেয়ামত দিন দিন বেড়েই যাবে এবং প্রত্যেক প্রথম অবস্থা থেকে পরবর্তী অবস্থা উত্তম ও শ্রেয় হবে। এতে জ্ঞানগরিমা ও আল্লাহর নৈকট্যে উন্নতি লাভসহ জীবিকা এবং পার্থিব প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদি সব অবস্থাই অন্তর্ভুক্ত। আর আপনার জন্য আখেরাত তো দুনিয়া থেকে অনেক, অনেক বেশি উত্তম হবে। (সাদি)


১. হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি তোমাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-


مَنْ جَعَلَ الْهُمُومَ هَمًّا وَاحِدًا هَمَّ الْمَعَادِ كَفَاهُ اللَّهُ هَمَّ دُنْيَاهُ وَمَنْ تَشَعَّبَتْ بِهِ الْهُمُومُ فِي أَحْوَالِ الدُّنْيَا لَمْ يُبَالِ اللَّهُ فِي أَىِّ أَوْدِيَتِهِ هَلَكَ


‘যার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হবে আখেরাত, তার পার্থিব চিন্তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার চিন্তায় মোহগ্রস্ত থাকে তার যে কোনো উপত্যকায় বা প্রান্তরে ধ্বংস হয়ে যাওয়াতে আল্লাহর কোনো পরোয়া নাই।’ (ইবনে মাজাহ ৪১০৬)


২. হজরত আবান ইবনে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হজরত যায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু দুপুরের সময় মারওয়ানের কাছ থেকে বের হয়ে এলে আমি ভাবলাম, নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার জন্য এ সময় তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আমাদের শোনা কিছু হাদিস শোনার জন্য মারওয়ান আমাদের ডেকেছেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-


مَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ فَرَّقَ اللَّهُ عَلَيْهِ أَمْرَهُ وَجَعَلَ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ مَا كُتِبَ لَهُ وَمَنْ كَانَتِ الآخِرَةُ نِيَّتَهُ جَمَعَ اللَّهُ لَهُ أَمْرَهُ وَجَعَلَ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ ‏


‘পার্থিব/দুনিয়ার চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দরিদ্রতা তার নিত্যসংগী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত বা পরকাল; আল্লাহ তার সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার সামনে এসে হাজির হবে।’ (ইবনে মাজাহ ৪১০৫)


৩. হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-


مَنْ كَانَتِ الآخِرَةُ هَمَّهُ جَعَلَ اللَّهُ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَجَمَعَ لَهُ شَمْلَهُ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ وَمَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ جَعَلَ اللَّهُ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَفَرَّقَ عَلَيْهِ شَمْلَهَ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ مَا قُدِّرَ لَهُ


‘যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্রিত করে সুসংযত করে দেবেন, তখন তার কাছে দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে। আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির গরীবি ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চাইতে বেশি কিছু পাবে না।’ (তিরমিজি ২৪৬৫)


আখেরাতের চিন্তাই উত্তম এবং সঠিক। পরকালের চিন্তা-ভাবনা মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় চিন্তা ও পেরেশানি থেকে মুক্ত রাখবে ইনশাআল্লাহ।


সুতরাং মানুষের উচিত, আখেরাত বা পরকালের চিন্তা বেশি বেশি করা। পরকালের চিন্তায় মানুষ দুনিয়ার অস্থিরতা, দারিদ্রতা ও পেরেশানি থেকে মুক্ত থাকা যায়। এ কারণেই মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে সতর্ক হওয়ার জন্য ঘোষণা করেছেন-


بَلۡ تُؤۡثِرُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا


‘কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দাও।’ (সুরা আলা : আয়াত ১৬)


وَ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ وَّ اَبۡقٰی


‘অথচ আখিরাতই উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।’ (সুরা আলা: আয়াত ১৭)


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশিবেশি পরকালের চিন্তাভাবনা করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার বরকত ও কল্যাণ দান করুন। আমিন।