প্রকাশ: ৬ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৫
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সময় ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) মাত্র ২৩ বছরে একটি ভেঙে পড়া জাতিকে বিশ্ব নেতৃত্বের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি সময়ের একটুও অপচয় করতেন না। সকাল থেকে রাতে তাঁর প্রতিটি কাজ ছিল সুনির্দিষ্ট, উদ্দেশ্যপূর্ণ এবং সুচারুভাবে বিন্যস্ত। তিনি ব্যক্তিগত ইবাদত, দাওয়াত, রাষ্ট্র পরিচালনা, যুদ্ধ-কূটনীতি, পরিবার ও সাহাবিদের শিক্ষাদান—সব কাজই সময়মতো করতেন। আমাদের উচিত তাঁর সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া।
রাসূল (সা.) দিনের শুরু করতেন ফজরের সালাতের মাধ্যমে। এরপর তিনি কিছু সময় জিকিরে মগ্ন থাকতেন এবং সাহাবিদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতেন। সকালেই তিনি প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় পরামর্শ সভা করতেন, যাতে দিনভর কাজের গতি থাকে। তাঁর এই অভ্যাস আমাদের শিখিয়ে দেয়, দিনের প্রথমভাগ কাজে লাগাতে পারলে দিনটিই সফল হয়।
মহানবী (সা.) মজলিসে অহেতুক কথা বলতেন না। এমনকি কেউ কথা বলার সময় তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং প্রয়োজন ছাড়া কাউকে থামিয়ে দিতেন না। অর্থহীন কথাবার্তা ও সময় নষ্ট তিনি অপছন্দ করতেন। তিনি বলেছেন, "যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।" (বুখারি ও মুসলিম)
ঘুম এবং বিশ্রামেও তাঁর মধ্যমপন্থা ছিল। তিনি রাতে কিছু সময় ঘুমাতেন, কিছু সময় ইবাদতে কাটাতেন। তিনি কখনোই রাতভর জেগে থেকে শরীরের ক্ষতি করতেন না। তাঁর শিক্ষা হলো—জীবন ও দেহকে ব্যালেন্স করে চলা। ইবাদত, কাজ, বিশ্রাম—সবকিছুর সমন্বয় থাকলে জীবনের উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কাউকে কোনো কাজ দিতে হলে, সেই ব্যক্তির সামর্থ্য বুঝেই দায়িত্ব দিতেন। তিনি অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতেন না। সময় ব্যবস্থাপনায় এই নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি অন্যের ওপর কাজ চাপাতে থাকি বা নিজের সামর্থ্য বুঝে কাজ না করি, তাহলে একসময় সব ভেঙে পড়ে।
তিনি বলতেন, "দুই নিয়ামতের ব্যাপারে অনেক মানুষ প্রতারিত—স্বাস্থ্য এবং অবসর সময়।" (সহীহ বুখারি)। আজকের মানুষ মোবাইল, টিভি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে অথচ জীবনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবে না। রাসূল (সা.)-এর জীবন আমাদের শেখায়—সময়ই হচ্ছে মূল সম্পদ, এটি নষ্ট করা মানে নিজের জীবন নষ্ট করা।
একজন প্রকৃত মুসলমানের জীবনে সময় ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। ইবাদতের সময় নির্দিষ্ট, কাজের সময় নির্দিষ্ট, বিশ্রামের সময় নির্দিষ্ট—এই শৃঙ্খলাই একজন মুমিনকে আল্লাহর প্রিয় করে তোলে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করলেই একজন ব্যক্তি সময়ের যথাযথ মূল্য দিতে শিখবে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করবে।
অতএব আমাদের উচিত, মহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে সময় ব্যবস্থাপনার শিক্ষা নিয়ে নিজের দিনকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো। যিনি সময়কে গুরুত্ব দেন না, তিনি জীবনের প্রকৃত মূল্যও বোঝেন না। ইসলাম শুধু নামাজ বা রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মধ্য দিয়েই প্রকৃত ইসলামী জীবন গঠিত হয়।