অযত্ন অবহেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বরিশালের গান্ধী আশ্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শনিবার ১৭ই ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:০৯ অপরাহ্ন
অযত্ন অবহেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বরিশালের গান্ধী আশ্রম

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠার ৭৬ বছরেও উন্নয়ন ছোঁয়া লাগেনি। দীর্ঘদিন থেকে গান্ধী আশ্রমে কোনো কার্যক্রম নেই। সরকারী কিংবা বেসরকারী উদ্যোগে দেখভালের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে গান্ধী আশ্রমটি। ওপরের টিনের চালা মরিচা পরে খসে পরছে। বর্যা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে পরে। ভাঙাচূড়া দরজা জানালা। অথচ এ আশ্রমটি সংরক্ষণ করা হলে হতে পারে একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।


সূত্রমতে, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের বেবাজ গ্রামের সাড়ে ১২ একর জায়গা নিয়ে ১৯৪৬ সালে গড়ে উঠেছিলো গান্ধী সেবাশ্রম। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা মহাত্মা গান্ধীর নামে ৭৬ বছর আগে গান্ধীবাদী নেতা সতীন্দ্রনাথ সেন, বিনোদ কাঞ্জিলালসহ অন্যান্যদের উদ্যোগে এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর ভ্রাতুপুত্র কানু গান্ধী ও তার স্ত্রী আভা গান্ধী।


জানা যায়, পূর্বে গান্ধী সেবাশ্রমের অধীনে একটি লাইব্রেরী, বিনামূল্যে চিকিৎসাকেন্দ্র, মৌমাছি পালন, চরকায় সুতা কাটা, বনায়নসহ বহু জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম ছিল। আশ্রম পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে রাস্তাঘাট উন্নয়ন, বালিকা বিদ্যালয় পুর্র্নগঠনসহ স্থানীয় দরিদ্রদের সহায়তা করা হতো। মূলত স্বদেশী ভাবনায় পল্লী সমাজ পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশমাতৃকার সেবা করার মানসিকতায় আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। দীর্ঘদিন থেকে গান্ধী আশ্রমে কোনো কার্যক্রম নেই। সরকারী কিংবা বেসরকারী উদ্যোগে দেখভালের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে গান্ধী আশ্রমটি।


আশ্রমের জায়গায় চারটি পুকুর ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আশ্রমে কোনো দৈনন্দিন কার্যক্রম নেই। বহু পুরোনো একটি টিনের ঘর ও নবনির্মিত একটি একতলা টিন সেট পাকা ঘর রয়েছে। এখানে গান্ধীজির একটি আবক্ষ মূর্তি নির্মাণ করা হলেও সেটি স্থাপন করা হয়নি।

আশ্রমের মধ্যেই প্রতিষ্ঠাতা বিনোদ কাঞ্জিলাল, উদ্যোক্তা সতীন্দ্রনাথ সেন ও রাম চট্টেপাধ্যায়ের সমাধী রয়েছে। ১৯৭১ সালে আশ্রমের একটি কাঠের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিলো পাক সেনারা। ওইসময় আশ্রমের বেশ কয়েকজন সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীকে হত্যা করা হয়। আশ্রমের তৎকালীন সম্পাদক শ্যামলাল হালদারের ছেলে অমৃত হালদারও পাক সেনাদের গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন।


বেবাজ গ্রামের মৃত্য রামপ্রসাদ ঘোষের স্ত্রী শংকরী রানী ঘোষ ভূমিহীন ও গৃহহীন হওয়ায় তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে বিগত ৩৫ বছর যাবত আশ্রমে বসবাস করে আসছেন। তারা জানিয়েছেন, আশ্রমে কোনো কার্যক্রম নেই। উন্নয়নের কিছু হচ্ছেনা। দিন দিন আশ্রমটি অবহেলা ও অযতেœ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ওপরের টিনের চালা মরিচা পরে খসে পরছে। বর্যা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে পরে। ভাঙাচূড়া দরজা জানালা। 


ইতোমধ্যে আশ্রম পরিদর্শন করেছেন রাজনীতিবিদ পংকজ ভট্টাচার্য, নির্মল সেন, সংসদ সদস্য পারভীন তালুকদার, ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি আশোক সেনসহ অসংখ্য কৃতিমান ব্যক্তিরা। তারা সবাই আশ্রম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজো তা আলোর মুখ দেখেনি। 


অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন ব্যক্তি ও দেশ-বিদেশ থেকে আশ্রম উন্নয়নের জন্য অনুদান আসলেও তা আশ্রমের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়নি। আশ্রমের পরিচালনা কমিটির কথিত কতিপয় নেতৃবৃন্দরা পুরো টাকা আত্মসাত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ এ আশ্রমটি সংরক্ষণ করা হলে হতে পারে একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।


গান্ধী আশ্রমের সাধারন সম্পাদক চন্দ্র নাথ চক্রবর্তী বলেন, গান্ধী আশ্রমে ২০০৫ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য পারভীন তালুকদার “গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল”র ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে হাসপাতাল নির্মানের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও রহস্যজনক কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তিনি আরও জানান, আশ্রমের অন্যতম উদ্যোক্তা সতীন্দ্রনাথ সেনের মৃত্যুর পর তার অনুসারীদের উদ্যোগে ২০০৩ সালে গান্ধী সেবাশ্রমের সাথে যোগ করে ‘সতীন্দ্র স্মৃতি গান্ধী আশ্রম’র নামকরণ করা হয়।