করোনায় ভিন্ন রূপে সুন্দরবন, বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: সোমবার ৩০শে আগস্ট ২০২১ ০৬:৫৩ অপরাহ্ন
করোনায় ভিন্ন রূপে সুন্দরবন, বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক জীবন

মহামারী করোনার কারণে পাঁচ মাস ধরে সুন্দরবনে বন্ধ রয়েছে দর্শনার্থীদের প্রবেশ। এ সময়টাতে নতুন সাজে সেজেছে বনটি। প্রকৃতি সুযোগ পেয়েছে নিজেকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নেওয়ার। মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দ না থাকায় বনে বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা। কেবল শোনা যাচ্ছে পাখিদের কুহুতান। বিভিন্ন প্রাণীর ঝাঁক দেখা যাচ্ছে। বনের নদ-নদী ও খালের পাড়গুলোতে দেখা মিলছে নানা জলজ জীব। গত ১০ বছরেও যেখানে বাঘের দেখা মেলেনি, সেখানেও দিনে দুপুরে আসছে বাঘ। এ যেন বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক চলাচল।



বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। সুন্দরবন দেখার আগ্রহ রয়েছে দেশ-বিদেশের সব বয়সের মানুষের। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। কিন্তু চলমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দুই বছরে দর্শনার্থীদের সেই ভ্রমণ সুযোগ অনেকাংশেই কমেছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ৩ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমণ। তাই বনে নেই মানুষের পদচারণা। নেই পরিবেশ দূষণকারী নৌযানের বিকট শব্দ ও চলাচল। পাঁচ মাস জনসমাগম না থাকায় গাছপালা, প্রাণ-প্রকৃতি আর পাখির কলকাকলীতে মুখর সুন্দরবন। ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে। দীর্ঘ ১০ বছরেও বনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বাঘের দেখা না মিললেও এখন প্রায় দিনে দুপুরে বাঘ দেখা যাচ্ছে সেখানে।



নানা প্রজাতির গাছপালা, পশুপাখি ও প্রাণীর বিচরণস্থল এই সুন্দরবন। স্বাভাবিক সময়ে সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দর্শনার্থীরা দেখতে পেতেন হরিণ, বানর, কচ্ছপ ও কুমিরের। অন্যান্য প্রাণী মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দে বনের ভেতরের দিকেই বিচরণ করত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে মানুষের পদচারণা ও নৌযানের শব্দ না থাকায় প্রাণীর ঝাঁক চলে আসছে বনের নদী ও খালের পাড়সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। যদিও এমন পরিবেশই বন্যপ্রাণীর প্রজননের উপযোগী।



করমজল পর্যটন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংগ্রহকারী কর্মচারী মো. লিটন মুন্সী ও মো. সুজন হাওলাদার বলেন, সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আমরা হরিণের খাদ্য অর্থাৎ পাতা সংগ্রহ করি। এখন দেখছি বনের নদী ও খালের পাড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ, বানর, শুকর, শজারু, সাপ ও পাখি। আগে এগুলো দেখতাম না। নৌযান ও পর্যটকদের চলাচল না থাকায় এসব প্রাণী এখন কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে। করমজল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আবুল হাসান বলেন, ‘আগে যখন নিয়মিত পর্যটক ও ট্রলার আসত, তখন দুই একটি হরিণ ছাড়া কিছু দেখা যেত না। কিন্তু এখন বিভিন্ন পশুপাখি ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যাচ্ছে। বনের ভেতর থেকে লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসছে।’



পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘দীর্ঘ নীরবতার কারণেই আগে যেসব প্রাণী অহরহ দেখা যেতো না, এখন সেসব প্রাণী ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যাচ্ছে। আগে বাঘ বনের গহীনে বিচরণ করলেও এখন তাও দেখা যাচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রের কাছাকাছি। মূলত শুনশান নীরবতার কারণেই বনের রূপ বদলে গেছে।’



সুন্দরবনে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ভ্রমণ করে। এসব ভ্রমণকারীর পরিবহণে ব্যবহৃত হয় প্রায় ২৫ হাজার ছোট-বড় নৌযান। করোনার কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় মানুষ ও নৌযান চলাচল না থাকায় বনের পরিবেশ পাল্টে গেছে।