প্রকাশ: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৯
কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত মঙ্গলবার সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে। বিচারক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম তার আবেদন নামঞ্জুর করে ওই নির্দেশ দেন। এর আগে সকাল ১১টায় সুলতানা পারভীন আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। আদালত চত্বরে উৎসুক জনতা সাবেক ডিসিকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়।
রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. বজলুর রশিদ এবং অ্যাডভোকেট আজিজার রহমান দুলু। আসামিপক্ষের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম। আদালতের এই নির্দেশের সঙ্গে মামলার দীর্ঘ তদন্ত এবং প্রমাণাদির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মামলার সূত্রপাত ঘটে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে, যখন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের বাসায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। তাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয় এবং ডিসি অফিসে নিয়ে যাওয়ার পর নির্মম নির্যাতন করা হয়। ওই সময় জেলা প্রশাসনের আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা অভিযানে অংশ নেন।
সেই রাতেই আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা থাকার অভিযোগে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনা দেশের সংবাদ জগতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে এবং মানবাধিকার রক্ষাকারী মহল ব্যাপক সমালোচনা করে।
মামলার পরে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশক্রমে মামলায় তদন্ত চলাকালীন সাবেক ডিসি হাইকোর্ট থেকে সাময়িক জামিন পান। মঙ্গলবার স্থায়ী জামিন পাওয়ার উদ্দেশ্যে আদালতে হাজিরা দিলেও আদালত তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেন যে, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা এবং মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে সাবেক ডিসি কারাগারে থাকাটাই প্রয়োজন। আদালতের নির্দেশ অনুসারে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাকে সঠিক নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা সহ কারাগারে স্থানান্তর করা হবে।
এদিকে মামলার সকল পক্ষ জানিয়েছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে চলা হবে। স্থানীয় জনগণ ও সাংবাদিক মহলে এই রায়কে যথাযথ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে দেখছে। মামলাটি সাংবাদিক স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক দায়িত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রসিকিউশন আশা করছে, আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে দেশের সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও অনিয়ম রোধে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। মামলার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আদালতের কঠোর পদক্ষেপ ভবিষ্যতে অনুরূপ ঘটনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।