প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৫
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম বলেছেন, রাজনীতি ভালো, এটা অবশ্যই করা যাবে। তবে রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় আর সাংবাদিকতা সাংবাদিকতার জায়গায়। দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকতে হবে, যাতে সাংবাদিকতায় এর প্রভাব না পড়ে। গণমাধ্যমের নিজস্ব মতামত বর্জন করতে হবে, এটা থাকলে গণমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতাকে প্রতিষ্ঠা করে। সাংবাদিকদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে হবে।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সভাকক্ষে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের অপ-সাংবাদিকতা প্রতিরোধ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন বিষয়ক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা প্রদানের লক্ষে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন এবং এবং অপসাংবাদিকতা রোধে সারাদেশে সাংবাদিকতের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। এজন্য সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাস রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের মর্যাদা নিশ্চিত করা না গেলে গণমাধ্যমকে কার্যত রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভে পরিণত করা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তা রোধ করতে সাংবাদিকদের আরো বস্তুনষ্ঠ সাংবাদিকতা চর্চা করতে হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সেমিনারে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারে প্রেস কাউন্সিল প্রণীত আচরণবিধি প্রতিপালনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব (উপসচিব) আবদুস সবুর।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ ইসলাম উদ্দিন এর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. সাখাওয়াত হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল থানার উপ-পরিদর্শক নৃপেন্দ্র বিশ্বাস।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের জয়েন সেক্রেটারি ও যুগান্তরের প্রতিনধি সৈয়দ সালাউদ্দিন, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক খোলা কাগজের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মোঃ এহসানুল হক, দৈনিক ইত্তেফাকের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি সৈয়দ ছায়েদ আহমদ। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম বলেছেন, সারা জীবন সংবাদপত্রে কাজ করেও শেষ জীবনে নিজের প্রতষ্ঠান থেকে অনেককে শূন্য হাতে ফিরতে হয়। কারো কারো বেলায় দেখা যায়, কোনো নিয়োগপত্রই নেই এবং কেউ কেউ বিনা বেতনে কাজ করে জীবন পার করে দেন। দেশে এমন পরিস্থিতি থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা খুব দরকার। আর সেটিই আমরা করা হচ্ছে। দেশের সাংবাদিক সমাজে বিভাজনের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ কেএম আব্দুল হাকিম বলেন, দেশের যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই একাধিক প্রেসক্লাব দেখছি। সিলেটে আটটি প্রেসক্লাব রয়েছে, যশোরে ১৮টি প্রেসক্লাবের তথ্য পেয়েছি, সুনামগঞ্জে সাতটি প্রেসক্লাব, মৌলভীবাজারে একাধিক প্রেসক্লাব। অথচ প্রেসক্লাব হলো একটি সামাজিক সংগঠন, যেখানে সাংবাদিকরা মিলিত হবেন, মতবিনিময় করবেন, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্য গড়ে তুলবেন। অতিরিক্ত বিভাজন পেশাদারিকে আঘাত করে।
সেমিনারে অপ-সাংবাদিকতা পরিহার করে দায়িত্বশীল ও পেশাদারী সাংবাদিকতা চর্চায় প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪ এর প্রয়োগ, সাংবাদিকদের অনুসরণীয় আচরণ বিধি ২০০২ সালের সংশোধিত ২৫ টি ধারা ও সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক প্রেস আপিল বোর্ড বিষয়ক আলোচনা করা হয়। সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব, উপজেলা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রিন্টি-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক অংশ নেন।