প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১১:৩৪
ইসরাইলের বিমান হামলায় ইরানে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। রোববার পর্যন্ত দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৪ জনে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসেইন কেরমানপুর এক্স-এ এক পোস্টে জানান, গত ৬৫ ঘণ্টায় ইসরাইলি বিমান হামলায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং একইসঙ্গে ১,২৭৭ জন আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসা চলছে বিভিন্ন হাসপাতালে।
কেরমানপুর জানান, হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য এবং ৯০ শতাংশেরও বেশি আহত ও নিহত ব্যক্তি সাধারণ বেসামরিক মানুষ। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এবং বহু পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ইসরাইলের হামলা শুরু হয় ১৩ জুন, যার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা। বিশেষ করে নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী প্রাণ হারান। ইরানের জন্য এটি শুধু মানবিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও বড় এক আঘাত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এই পরিস্থিতিতে ইরানও চুপ করে থাকেনি। প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার থেকে ইসরাইলের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি ও সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরানি বাহিনী। এতে বেশ কয়েকজন ইসরাইলি নাগরিক হতাহত হন এবং কিছু ঘাঁটিতে বড় ধরনের ক্ষতি হয় বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে।
দুই দেশের এই সামরিক উত্তেজনায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও উভয় পক্ষই আপাতত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই সংঘাতের ফলে শুধু ইরান ও ইসরাইল নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সাধারণ জনগণের ওপর বিমান হামলা চালানো যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে এবং তা আন্তর্জাতিক আইনে বিচারযোগ্য। তারা অবিলম্বে এই সহিংসতা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে ইরানের অভ্যন্তরে জনগণের ক্ষোভও বাড়ছে। বহু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তবে সরকার বলছে, প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হয়েছে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান অগ্রাধিকার।