প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৯
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি হামলা ও দুর্ভিক্ষের কারণে প্রতিদিনই নতুন করে প্রাণহানি ঘটছে। সম্প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ৭২ জন নিহত হয়েছে, এছাড়া অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এ ঘটনা ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৭১৮ জনে। নিহতদের মধ্যে অনেকের মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপে বা রাস্তায় পড়ে রয়েছে, এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৫৬ জন আহত হয়েছে, যার ফলে মোট আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৯ জনে পৌঁছেছে।
ত্রাণ বিতরণের সময়ও ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ঘটেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের সময় আরও ৯ জন নিহত এবং অন্তত ৮৭ জন আহত হয়েছে। ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ৪৬৫ জন এবং আহত ১৭ হাজার ৯৪৮ জন।
দূর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে একজন শিশু। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত দুর্ভিক্ষে মৃতের সংখ্যা ৪১১ জন, যার মধ্যে ১৪২ জন শিশু। জাতিসংঘ সমর্থিত ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি গাজাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ অঞ্চল ঘোষণা করার পর থেকে এক মাসে ১৩৩ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে ২৭ জন শিশু।
ইসরাইল চলতি বছরের মার্চ থেকে গাজার সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ২৪ লাখ মানুষের জনপদ মারাত্মক দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়েছে। ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নতুন করে হামলা শুরু করলে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ১৭০ জন নিহত এবং ৫১ হাজার ৮১৮ জন আহত হয়েছে।
গাজার পরিস্থিতি ক্রমশ মানবিক সংকটে পরিণত হচ্ছে। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসাসেবার তীব্র অভাবে সাধারণ মানুষ প্রতিদিন বিপদের মুখে পড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো এখন সময়োপযোগী এবং জীবন রক্ষার একমাত্র উপায়। গাজায় চলমান এই সংকট বিশ্বের নজরকাড়া মানবিক বিপর্যয় হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ও সংগঠনগুলো অবিলম্বে হস্তক্ষেপ না করলে ফিলিস্তিনিদের জীবন যাত্রা ক্রমশ বিপন্ন হবে এবং প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়বে। মানুষকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া এবং জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।