অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেন সুরভী-৭ লঞ্চের ৫ শতাধিক যাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩০ অপরাহ্ন
অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেন সুরভী-৭ লঞ্চের ৫ শতাধিক যাত্রী

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া নদীতে একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ঢাকা থেকে বরিশালগামী সুরভী-৭ লঞ্চের তলা ফেটে গেছে এবং বাল্কহেডটি ডুবে গেছে। এতে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বাল্কহেডের এক শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। বুধবার রাতের এ ঘটনায় সুরভী-৭ লঞ্চে থাকা ৫ শতাধিক যাত্রীকে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে করে বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ বরিশালের পরিদর্শক কবির হোসেন। 


বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছানো যাত্রীরা জানান, বাল্কহেডটির কোনো সাংকেতিক বাতি ছিল না। দ্রুতগতির চলা সুরভী-৭ লঞ্চের সাথে প্রথমে বাল্কহেডটির সংঘর্ষ হয়। বিষয়টি খেয়াল না করে মানামী লঞ্চ সুরভী লঞ্চকে ওভারটেক করতে গিয়ে মানামী লঞ্চের সাথেও বাল্কহেডটির ধাক্কা লাগার উপক্রম হয়। মানামী লঞ্চের পাশে আরও একটি বাল্কহেড ছিল, সেটিও অল্পের রক্ষা পেয়েছে। দুইটি বাল্কহেডের মাঝখান দিয়ে দ্রুতগতিতে মানামী লঞ্চটি বের হয়ে যায়। এ সময় সুরভী লঞ্চের পেছনে পারাবাত-১৮ লঞ্চটি ছিল। অল্পের জন্য সুরভী লঞ্চের সাথে ধাক্কা লাগেনি পারাবাত লঞ্চের। মূলত মানামী, সুরভী ও পারাবাত লঞ্চ নদীতে প্রতিযোগিতা করে চলছিল। পুরো দোষ বাল্কহেডের থাকলেও এমনভাবে লঞ্চ চালানো উচিত নয়।


যাত্রীরা আরও জানান, ধাক্কা লাগার পর সুরভী-৭ লঞ্চটি কিছুক্ষণ থামিয়ে রেখে আবার চালু করা হলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। পরে নদীর তীরে লঞ্চটি নোঙর করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা আসেন।  


এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের মাস্টার হুমায়ুন কবির জানান, তাদের লঞ্চটি বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের থ্রি এ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ডে মেরামতের জন্য নেয়া হয়েছে। তবে লঞ্চের যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা পানির উপরিভাগে থাকায় বড়ধরনের কোনো ঝুঁকি ছিল না। তারপরও যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চ ঘটনাস্থলে এনে যাত্রীদের সেটিতে উঠিয়ে রাত ৩টার দিকে বরিশালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।


তিনি আরও জানান, বাল্কহেডটিতে কোনো ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন বা বাতি ছিল না। ফলে সেটি রাতে দূর থেকে দেখাও যায়নি। আর ওই বাল্কহেডটি অন্য একটি বাল্কহেডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছিল এবং বাল্কহেডটি নৌপথে চলাচলের নির্ধারিত পাশ থেকে বিপরীত পাশ দিয়ে চলছিল বলে দাবি করেন তিনি।


তিনি বলেন, রাতে নৌপথের নিরাপত্তার স্বার্থে বাল্কহেড চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও নিয়মিত বাল্কহেড চলাচল করছে। এ ঘটনার সময় কাছাকাছি এমভি পারাবত-১৮ ও মানামী নামে দুটি লঞ্চ ছিল। যেগুলোও দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারতো।  


কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জহিরুল হক জানান, বালুবাহী বাল্কহেডটি ঢাকার ডেমরার দিকে যাচ্ছিলো। লঞ্চের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এটি ছয়জন শ্রমিক নিয়ে ডুবে যায়। তাদের মধ্যে পাঁচজন শ্রমিককে জীবিত পাওয়া গেলেও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা নিখোঁজ শ্রমিককে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। 


এ ঘটনায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ মেরিন আদালতে মামলা দায়ের করবে বলে জানিয়েছেন মাস্টার হুমায়ুন কবির।