প্রকাশ: ৫ আগস্ট ২০২৫, ১১:০
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ইতিহাসে আজকের দিনটি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেল। দীর্ঘ একমাসের রক্তাক্ত ছাত্র আন্দোলনের পর এদিনে দেশজুড়ে অভ্যুত্থান ঘটে, পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের। জনগণের ঐক্য, আত্মত্যাগ ও ছাত্রদের দৃঢ় মনোভাবের কাছে মাথানত করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং ভারতে পালিয়ে যান।
‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক পেয়ে রাজধানীমুখী মানুষের ঢল নামে সারা দেশ থেকে। দুপুরের দিকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে রাস্তায় নামে লাখো মানুষ। ঢাকার রাজপথে ঠাঁই হয় না মানুষের ভিড়ে। গণভবন, সংসদ ভবন এবং সরকারি বাসভবনের চত্বরে ঢুকে পড়ে উল্লসিত জনতা।
ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে। জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন অল্পদিনেই ছড়িয়ে পড়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে। সরকারের একগুঁয়েমি ও বলপ্রয়োগ আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়ে আরও ক্ষুব্ধ করে ছাত্রসমাজকে।
১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলনে রক্তের ধারা নামে। এরপর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলায় প্রাণ হারান শতাধিক সাধারণ নাগরিক। শিশু, নারী, বৃদ্ধ কেউই রেহাই পাননি। আন্দোলন আর কোটা সংস্কারের দাবি ছাড়িয়ে পরিণত হয় সরকার পতনের ডাক হিসেবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই-আগস্টের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১,৪০০ জন, যাদের মধ্যে ১১৮ জন শিশু। আহত প্রায় ১২ হাজার। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার নির্মম চেহারা স্পষ্ট হয় এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
এই আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনের নয়, বরং একটি জনগণের জাগরণ। লাখো মানুষের লাঠিসোঠা হাতে রাজপথে নামা, স্বৈরাচারবিরোধী স্লোগান আর গণভবনের পতাকা উত্তোলনের ছবি আজ ইতিহাসের অংশ।
পাঁচ আগস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার আজ প্রথমবারের মতো পালন করছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিকাল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন। এ উপলক্ষে সরকারি ছুটির ঘোষণা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দিনটি চিহ্নিত হলো স্বৈরশাসনের অবসান এবং ছাত্র জনতার বিজয়ের নিদর্শন হিসেবে।