প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৩৭
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের মধ্যে এককালীন অনুদান ও মাসিক ভাতা সমান তিন ভাগে বণ্টনের নতুন বিধিমালা জারি করেছে। এটি শহীদ পরিবারে অনুদান কেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব কমানো ও কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপ। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অনুদান বিতরণের সময় শহীদ পরিবারের মধ্যে বিতর্ক ও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, যা সহায়তা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করত। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি সহায়তা এখন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বিতরণ করা হবে।
নতুন বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহায়তা প্রদানের সময় স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের জন্য সমান ভাগ নির্ধারণ করা হবে। শহীদ পরিবারের স্বামী বা স্ত্রী অনুদানের এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। একাধিক স্ত্রী থাকলে তা সমানভাবে ভাগ হবে। শহীদের ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তানও এক-তৃতীয়াংশ ভাগে পাবে। একাধিক সন্তান থাকলে এই ভাগ সমানভাবে বণ্টন হবে। শহীদ ব্যক্তির বাবা-মা বাকি এক-তৃতীয়াংশ পাবেন এবং মা ও বাবার মধ্যে অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে অবশিষ্ট অংশ সম্পূর্ণভাবে অন্য জন পাবেন। স্বামী বা স্ত্রী না থাকলে তাদের অংশ সন্তান ও বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, শহীদ পরিবার বা যোদ্ধার কোনো সদস্য মারা গেলে তার মাসিক ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। স্বামী বা স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করলে তার ভাতার অংশ বাতিল হবে। আহত জুলাই যোদ্ধা মারা গেলে তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। আহতদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।
শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসন ও কল্যাণের জন্য তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা, জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক, এবং উপজেলা কমিটির সভাপতি ইউএনও হবেন। কমিটিগুলি সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন করবে।
পুনর্বাসন কার্যক্রমে উপার্জনমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়েও বিধিমালা উল্লেখ করেছে। এতে তথ্যপ্রযুক্তি, ডিজাইন, ফ্রিল্যান্সিং, মেকানিক্যাল, কৃষি, পশুপালন, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি ফার্মিং, বস্ত্রশিল্প এবং খাদ্য ও আতিথেয়তা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ উদ্যোগ আত্মকর্মসংস্থান ও উপার্জন বৃদ্ধির জন্য ঋণ বা সহায়তা প্রদানের সুযোগও প্রদান করবে।
বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে। বোর্ডে শহীদ পরিবারের বিরোধী সদস্য, মহাপরিচালকের মনোনীত একজন প্রতিনিধি এবং দুই পক্ষের মনোনীত একজন সালিশকারী থাকবেন। বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হলে ৩০ দিনের মধ্যে মহাপরিচালকের কাছে আপিল করতে পারবে।
মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা জানান, নতুন বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের জন্য আর্থিক সহায়তা বিতরণ আরও স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হবে। এটি পরিবারে অনুদান বিতরণের সময় সংঘটিত বিতর্ক ও দ্বন্দ্ব কমাতে এবং শহীদদের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে নতুন বিধিমালা একটি সুস্পষ্ট গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে, যা সহায়তা কার্যক্রমকে আরও সুশৃঙ্খল ও ফলপ্রসূ করবে। সরকারের এই উদ্যোগ প্রমাণ করছে যে, শহীদ পরিবারের সদস্যদের অধিকার ও কল্যাণ সুরক্ষা প্রাধান্য পাচ্ছে।