নুসরাত হত্যার ফাঁসির রায় বাতিল হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৪শে অক্টোবর ২০১৯ ০৫:৩১ অপরাহ্ন
নুসরাত হত্যার ফাঁসির রায় বাতিল হবে

দেশের ইতিহাসের নৃশংসতম ও আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় ১৬ আসামির সকলকে মৃত্যুদণ্ডসহ এক লাখ টাকা দণ্ডিত করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে রায় ঘোষণা করা হয়। 

দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

রায়ের পর আসামিপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, আমরা যথাসময়ে, যথানিয়মে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করব। এ রায় অবশ্যই হাইকোর্টে বাতিল হবে এবং আপিল বিভাগ সব আসামিদের খালাস করে দেবেন। এটা আমাদের নিশ্চিত প্রত্যাশা। সব আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন নুসরাতের বাবা এ কে এম মুসা। পাশাপাশি, পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এসময় তদন্ত দ্রুত শেষ করায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান নুসরাতের বাবা। 

আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে দ্রুত যেন রায় বাস্তবায়ন করা হয়। তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। নুসরাত হত্যার রায়ে সন্তষ্টি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন  ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অবিশ্বাস মনে হলেও নুসরাত হত্যার বিচারের মধ্যদিয়ে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে।  ওবায়দুল কাদের বলেন, অবিশ্বাস্য যে দ্রুততার সঙ্গে এই হত্যা মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে সরকার সন্তুষ্ট ও স্বস্তি প্রকাশ করছে।  সেতুমন্ত্রী বলেন, রায়ে ১৬ আসামির সবারই ফাঁসি হয়েছে। এ রায় নিয়ে কোনো বিরুপ প্রতিক্রিয়া হয়নি। আমার মনে হয় নুসরাতের পরিবারও এ রায়ে সন্তুষ্ট হবে। 
এছাড়া নুসরাত হত্যার রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, নুসরাত হত্যার ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর স্বল্প সময়ে রায় হওয়া উচিত। এ রায় চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে হাইকোর্টে। এতে কতজনের ফাঁসি থাকবে, থাকবে না তা হাইকোর্টের বিবেচ্য বিষয়। এত অল্প সময়ে বিচার কাজ শেষ হওয়ায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে সন্তুষ্ট প্রকাশ করছেন বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এমন রায়ে সন্তুষ্টি বিরাজ করছে ফেনীর সর্বমহলে। তাই রায়ের পরই আদন্দ মিছিল করে ফেনীবাসী। তবে রায় ঘোষণার পরই আদালতে প্রকাশ্যে আসামিরা প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দেয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নুসরাতের পরিবার। তাই রায় কার্যকর হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা চান তারা। 

রায়কে ঘিরে সকাল থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল পুরো আদালত এলাকাজুড়ে। পরে বেলা ১১ টায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন ও কাউন্সিলর মাকসুদসহ মামলার ১৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। একপর্যায়ে দুই পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করে বিচারক। রায় পড়া শেষে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।  রায়ের পর এলাকার বিশিষ্টজনরা জানান, এ রায়ের মাধ্যমে আইনের শাষণে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। প্রমাণ পেয়েছে অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক তাদের রক্ষা নেই। 

এদিকে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড কিছুতেই মানতে পারছেনা নুসরাতের পরিবার। তাই আদালত প্রাঙ্গণে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তারা জানান, আদালত প্রাঙ্গণে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় জীবন নিয়ে রয়েছেন শংকায়। নুসরাত হত্যা মামলার কার্যক্রম শেষ হলেও নুসরাতের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় অপরাধে ওসি মোয়াজ্জেমকেও দ্রুত সাজা দেওয়ার দাবি জানান নুসরাতের পরিবার।
ইনিউজ ৭১/এম.আর