নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, তা ভোটের প্রস্তুতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে কাঠামোগতভাবে সাজানোর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। রোডম্যাপে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচন আইন ও বিধি সংস্কার, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, আইসিটি সমন্বয়, জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা, নির্বাচনী ব্যালট ও সরঞ্জাম সংগ্রহসহ ২৪টি বিষয় ২০৭ ধাপে বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে।
তবে সাধারণ জনগণ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এক প্রশ্নে মনোযোগী: এই রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হলে কি ভোটগ্রহণ স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে? জনগণের জন্য নির্বাচনের মূল প্রত্যাশা কেবল সময়মতো ভোট নয়, বরং ভোটের প্রক্রিয়া ও ফলাফল যেন সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়। তারা আশা করে, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, আর ভোটাররা রাজনৈতিক চাপ, প্রভাব বা ভীতি থেকে মুক্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
রোডম্যাপের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সংলাপ। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অংশীজন সংলাপ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে। তবে, সংলাপ কার্যকর হবে কেবল তখনই যদি কমিশন রাজনৈতিক প্রভাব থেকে স্বাধীন ও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে। অন্যথায় সংলাপ কেবল আনুষ্ঠানিকতা হয়ে যাবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রবাসী ভোটার। প্রবাসীরা ভোটে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন আরও অংশগ্রহণমূলক হবে, তবে প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ সমাধান না হলে এ অংশগ্রহণ কার্যত সীমিত থাকবে।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রোডম্যাপ বাস্তবায়ন এবং নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে শুধু পরিকল্পনা নয়, মাঠে কার্যকর প্রশাসন, আইসিটি অবকাঠামো, প্রশিক্ষিত ভোটকর্মী এবং স্বচ্ছ মনিটরিং অত্যাবশ্যক। জনগণ চায়, ভোটের মাধ্যমে সরকারের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার হোক, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রকৃত গণতন্ত্রের ধারায় চলে।
শেষ পর্যন্ত, রোডম্যাপ কেবল একটি কাগজের নির্দেশনা নয়। এটি বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন শুধু আয়োজিত হবে না, বরং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা পুনর্নির্মাণ করবে। জনগণের প্রত্যাশা স্পষ্ট—ভোট সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে, আর রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।
লেখক: এম.কে. রানা, গণমাধ্যমকর্মী