প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৭
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ছিল মানবিকতা, দয়া এবং ক্ষমাশীলতার সর্বোচ্চ উদাহরণ। তিনি এমন এক সমাজে জন্মেছিলেন যেখানে কঠোরতা, প্রতিশোধ এবং অমানবিক আচরণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। তবু তিনি মানুষের প্রতি দয়া, অসহায়দের প্রতি সহানুভূতি এবং শত্রুর প্রতিও ক্ষমার মাধ্যমে পৃথিবীকে দেখিয়েছেন প্রকৃত মানবিকতার পথ। আল্লাহর কিতাব কুরআনে বারবার মানবিকতার শিক্ষা এসেছে, যেমন সূরা আনবিয়ায় বলা হয়েছে, “আমি আপনাকে পাঠিয়েছি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ।”
রাসূলুল্লাহ (সা.) ক্ষুধার্তদের খাওয়াতেন, অসুস্থদের খোঁজখবর নিতেন এবং এতিমদের প্রতি মমতাশীল ছিলেন। এমনকি তিনি অমুসলিম প্রতিবেশীর অসুস্থতার খবর শুনে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন, মানবিকতার কোন সীমানা নেই; ধর্ম, বর্ণ বা জাতি দ্বারা এর সীমা নির্ধারণ করা যায় না।
হাদিসে বর্ণিত আছে, এক নারীকে জান্নাত দেওয়া হয়েছিল শুধু একটি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাওয়ানোর কারণে। অন্যদিকে এক নারীকে জাহান্নামে পাঠানো হয়েছিল একটি বিড়ালকে না খাইয়ে রাখার জন্য। এই শিক্ষা থেকে বোঝা যায়, দয়া শুধু মানুষের প্রতি নয়, প্রাণীদের প্রতিও থাকা উচিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো তায়েফের ঘটনা। যখন তিনি সেখানে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন শহরের মানুষ তাকে অপমান করে রক্তাক্ত অবস্থায় বের করে দেয়। তবুও তিনি তাদের জন্য অভিশাপ করেননি বরং দোয়া করেছিলেন—“হে আল্লাহ, এরা জানে না, তাই ক্ষমা করো।”
মানবিকতার শিক্ষা শুধু আবেগপ্রবণতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার রক্ষার দিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।” এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দয়া এবং মানবিকতা আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম উপায়।
আজকের বিশ্বে দয়া ও মানবিকতার এই শিক্ষা বিশেষভাবে প্রয়োজন। সহিংসতা, ঘৃণা ও বিভাজনের যুগে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন আমাদের পথ দেখাতে পারে। সমাজে সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং ক্ষমাশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করা আবশ্যক।
ইসলামের এই নির্দেশনা শুধু ব্যক্তিগত জীবনের জন্য নয়; সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও প্রযোজ্য। অসহায়, দরিদ্র ও নিপীড়িতদের প্রতি করুণা ও সাহায্য প্রদর্শন করাই ইসলামী সমাজের ভিত্তি। কুরআনের সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, “সৎকর্ম শুধুমাত্র নামাজ ও রোজায় নয়, বরং দানশীলতা, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো এবং মানবিক আচরণ।”
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা যদি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে দয়া ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবে পৃথিবী আরও শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণময় হবে। ইসলামের প্রকৃত চেতনা হলো মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও করুণা ছড়িয়ে দেওয়া, যা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।