ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তিনদিন পর ব্যবহৃত ব্যালট বইয়ের ৩৩টি মুড়ি কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করে জমা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায়। শুক্রবার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান সোহাগ হাওলাদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, চতুর্থ ধাপে গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের আমলিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১২ নম্বর) ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. এনামুল হক ব্যালট বইয়ের এ ৩৩টি মুড়ি জমা দিয়েছেন। ভোট গ্রহণের তিনদিন পর ২৯ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে ব্যবহৃত ব্যালটের মুড়িগুলো জমা দিয়েছেন তিনি। এসময় তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদন দিয়েছেন।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এনামুল হকের স্বাক্ষরিত সেই আবেদনের কপি শুক্রবার এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। লিখিত আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে রেজাল্ট (ফলাফল) প্রস্তুত করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন। কিন্তু ভুলবশত কাস্টিং ভোটের মুড়িগুলো বস্তাবন্দি করতে ভুলে যান তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে সেই কেন্দ্র থেকে মুড়িগুলো নিয়ে এসে ২৯ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিটে জমা দেন। মোট মুড়ির সংখ্যা ৩৩টি। নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, প্রতিটি বইয়ের মুড়িতে ১০০ ব্যালট থাকে। সে হিসাবে ৩৩টি মুড়িতে ৩ হাজার ৩০০ ব্যালট থাকার কথা। জানা যায়, ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৬৭ জন। এরমধ্যে ভোট প্রয়োগ হয় ১ হাজার ৪২৪টি।
নিয়মানুযায়ী, ভোটগ্রহণ এবং গণনার পর রেজাল্ট শীট তৈরি করার পর ওইদিনই ব্যালট পেপার ও বইয়ের মুড়িসহ যাবতীয় সবকিছু সিলগালা করে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু ভোটের তিনদিন পর ব্যালট বইয়ের মুড়ি জমা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে। এতে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে পরাজিত চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীদের নানা প্রশ্ন উঠছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গলাচিপা হাজী কেরামত আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও নির্বাচনকালীন রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের আমলিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মো. এনামুল হক বলেন, ‘ভোট শেষে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা তাড়াহুড়ো করছিল। তাই ভুলবশত আলমারিতে ব্যালট বইয়ের মুড়ি রেখে এসেছিলাম। মানুষ মাত্র ভুল হতেই পারে। পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে জানালে আমি স্কুল থেকে মুড়িগুলো এনে জমা দেই।’ এ প্রসঙ্গে আরও জানতে চাইলে আমলিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘আমি ট্রেনিংএ আছি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অফিসে এসে মুড়িগুলো জামা দিয়ে গেছে। আমাকে আমার স্টাফ জানিয়েছে। আমি এসে সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে আপনাদের তদন্ত সাপেক্ষে আরও বিস্তারিত জানাবো।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। আসলে প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছে, তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।