বাবা হয়ে দুই এতিম কন্যার বিয়ে দিলেন ডিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৭শে অক্টোবর ২০২২ ০৭:৫২ অপরাহ্ন
বাবা হয়ে দুই এতিম কন্যার বিয়ে দিলেন ডিসি

সানাইয়ের সুরে বিয়ের রঙিন সাজে সাজেন দুই কন্যা, যাবেন নতুন ঠিকানায়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ দিনটিতে পাশে থাকার কথা মা-বাবা, পরিবার-পরিজনের, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কেউ থাকার সুযোগ ছিলো না। তবে বাবা-মা না থাকলেও পাশে ছিলেন আত্মার সম্পর্কের এক বিশাল পরিবার। 


বৃহস্পতিবার ( ২৭ অক্টোবর) দুপুরে মৌলভীবাজার সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত এতিম ও প্রতিবন্ধী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দুই এতিম কন্যার এমন ব্যতিক্রমী বিয়ে হয়। যাদের বেড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানে। এ দুই দম্পতির জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের আয়োজন করে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন।


দুই কন্যা শাকিলা ইসলাম ও নয়নতারা। ওদের মধ্যে শাকিলা ইসলামের বিয়ে হয় আল আমিনের সঙ্গে এবং নয়নতারার বিয়ে হয় মো. সাব্বিরের সঙ্গে।


দুই কন্যা বলেন, আমাদের মা-বাবা থাকলে আজ যা করতেন, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর আমাদের জন্য তা-ই করেছেন। আয়োজনে কোন কমতি রাখেননি তারা। এভাবে আমাদের বিয়ে হবে, তা কখনও ভাবতে পারিনি।


এর আগে দুই কন্যা বউ সেজে গাড়িতে করে আসেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এরপর একে একে আসেন বর, সঙ্গে বরযাত্রীও। ছিল গেটে সালামির জন্য বর আর কনে পক্ষের তর্কাতর্কি।


দুই কন্যা ও তাদের বরদের জন্য সাজানো হয় রাজকীয় স্টেজ। এ বিয়ে অনুষ্ঠানে কমতি ছিলোনা কিছুই, নানান ফুল আর আলোতে সাজানো হয় বিয়ের মঞ্চ। আমন্ত্রিতদের জন্য আয়োজন করা হয় পোলাও, মাছ, চিকেন রোস্টসহ পাঁচ পদের খাবার। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিরাও সবাই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন দামী উপহার।


জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার একেএম মিজানুর রহমান বলেন, এরা আমার মেয়ের মত। তাদের বিয়েতে যাতে কোনো ধরনের কমতি না হয়, এজন্য সব আয়োজন করা হয়। দুই মেয়ের অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক অতিথির জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। জেলা সর্বস্তরের মানুষ এ বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমার দুই কন্যার জন্য দোয়া করেছেন।


জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের দুই কন্যার প্রশিক্ষক মো. শামীমুর রহমান বলেন, দুই তরুণী সিলেট সমাজসেবা পরিচালিত শিশু পরিবার থেকে দু’বছর হল এখানে এসেছে। নয়নতারা ট্রেইলারিং ও শাকিলা ড্রাইভিং শিখেছে। পাশাপাশি বর আল-আমিন টিউবওয়েল মিস্ত্রি এবং সাব্বির সিএনজিচালিত আটোরিকশা চালক।


জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, একজন পিতা তার কন্যাদের যেভাবে বিয়ে দেন, তেমনি এ কন্যাদের পিতা হিসেবে একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা হিসেবে আমি তাদের বিয়ে দিচ্ছি। সব নিয়ম সব আনুষ্ঠানিকতায় এ বিয়ের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হল। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দুই নবদম্পতিকে এক লক্ষ করে মোট দুই লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে।


এর আগে, গতকাল বুধবার উক্ত প্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে হয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। এসময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলার পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান বাঁধনসহ জেলার সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।