ঝিনাইদহ জেলায় মাদকের ভয়াবহ থাবা দিন দিন বিস্তার লাভ করছে। ভারতীয় সীমান্তবর্তী হওয়ায় প্রতিদিন চোরাইপথে ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও কোকেন ঢুকে পড়ছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। মাদক প্রবাহের এ হুমকি এখন শুধু শহরে সীমাবদ্ধ নেই; গ্রাম-গঞ্জের চায়ের দোকান, হাট-বাজার এমনকি স্কুল-কলেজের আশপাশেও পৌঁছে গেছে এসব নেশাদ্রব্য। সীমান্তবর্তী মহেশপুর উপজেলার সড়কপথ হয়ে অভিনব কৌশলে মাদক পাচার হচ্ছে—কখনো খাদ্যসামগ্রীর বস্তায়, কখনো শাকসবজির চালানে, আবার কখনো মোটরসাইকেলের বিশেষ চেম্বারে লুকিয়ে।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে মাদক সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে এবং গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি। তবে শাস্তি পেয়েছে হাতে গোনা কয়েকজন। জেলার ৬টি উপজেলায় অন্তত চার শতাধিক মাদকের স্পট রয়েছে, যার অধিকাংশই ভ্রাম্যমাণ। বিকেলের পর এসব স্পটে মোটরসাইকেল মিছিল নিয়ে হাজির হয় মাদকসেবীরা, আর মধ্যরাত পর্যন্ত চলে জমজমাট আসর। সদর, শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডু, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরের শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সহজলভ্য এসব নেশাদ্রব্য এখন হাত বাড়ালেই মিলছে। বেশি অর্থ দিলে হোম ডেলিভারিও পাওয়া যায়।
জেলাজুড়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে মাদক সরবরাহকারী চক্র। মাঝে মধ্যে খুচরা কারবারিরা ধরা পড়লেও মূল রাঘব বোয়ালরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। শহরের চাকলাপাড়া, মহিষাকুণ্ডু, আরাপপুর, পবহাটি, ষাটবাড়িয়া, উদয়পুর, ভুটিয়ারগাতী, হামদহ, ব্যাপারীপাড়া, কাঞ্চনপুর, পাগলাকানাই, আদর্শপাড়া, মর্ডাণ মোড়, বাইপাস মোড়, আলহেরাপাড়া সহ অন্তত ৩০টির বেশি স্থানে প্রকাশ্যে চলছে মাদক বেচাকেনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু রাজনৈতিক নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যক্ষ মদদে এই কারবার চলছে।
সুজনের জেলা কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু বলেন, "মাদকের থাবা থেকে ঝিনাইদহকে বাঁচাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সামাজিক প্রতিরোধ ও কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি। নইলে তরুণ প্রজন্ম নেশার অন্ধকারে ডুবে যাবে, যার প্রভাব গোটা দেশে পড়বে।" জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলক চন্দ্র মজুমদার জানান, "বর্তমানে কিশোর ও তরুণদের মাদকসেবীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, "নিয়মিত অভিযান চললেও মাদক কারবারিদের মূল সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। প্রশাসনের একার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া মাদক নির্মূল হবে না।"