পরনে স্বল্প পোশাক, কিশোরীকে বাসে উঠাতে নারাজ চালক

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৬ই জুন ২০২২ ০৬:৫২ অপরাহ্ন
পরনে স্বল্প পোশাক, কিশোরীকে বাসে উঠাতে নারাজ চালক

যাত্রীর পরা পোশাকটি পছন্দ হয়নি চালকের। আর সেই অপছন্দ এমনই, যে, তার জেরে বাসে উঠতেই দেওয়া হল না সেই যাত্রীকে। হ্যাঁ, ঠিক এমনটাই ঘটেছে মাত্র তেরো বছর বয়সের এক কিশোরীর সঙ্গে। কোথায় ঘটেছে এমন ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।


মোল্লা নাসিরুদ্দিনের সেই গল্প মনে পড়ে? যেখানে মজার ছলে নাসিরুদ্দিন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কেমন করে বাইরের পোশাক দেখেই মানুষকে বিচার করি আমরা। না, কেবল আর্থিক বা সামাজিক অবস্থান নয়, মানুষের স্বভাবচরিত্র সম্পর্কেও যে আমরা অনেকসময় ধারণা করে ফেলি সেই পোশাকের সূত্রেই। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েই থাকে। কেবল রক্ষণশীল দেশেই যে মেয়েদের পোশাকবিধি নিয়ে ফতোয়া জারি করা হয় তা তো নয়, আরও অনেক জায়গাতেই পোশাক দেখে মেয়েদের বিচার করতে থাকে সতর্ক চোখ। সেই বিষয়টিকেই যেন ফের উসকে দিল এই সাম্প্রতিক ঘটনা।


কী ঘটেছে ঠিক? আসছি সে কথাতেই।

বাস ধরার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করছিল বছর তেরো বয়সের কিশোরী, তামারা লাহাভ। গরমের দিনে আরাম পাওয়ার জন্য তার পরনে ছিল ক্রপ শার্ট আর শর্টস। কিন্তু আরামের বদলে উলটে বিপত্তি বাধল সেই পোশাক নিয়েই। তার গন্তব্যে যাওয়ার বাসটি যখন ওই স্থানে পৌঁছয়, বাসে উঠতে গেলে বাধা দেওয়া হয় কিশোরীকে। বাসের চালক বলেন, ওই কিশোরীর পোশাক দেখে মনে হচ্ছে, তা যেন অন্যদের কাছে যৌন নির্যাতনের শামিল। অর্থাৎ এই সংক্রান্ত আইনের বিরুদ্ধতা করছে এমন পোশাক, দাবি ছিল ওই চালকের। এমনকি তার কাছে আব্রু রক্ষার জন্য কোনও বাড়তি জামাকাপড় আছে কি না, এহেন কথাও জিজ্ঞাসা করেন ওই বাসচালক। স্বভাবতই, এ জাতীয় কথায় রীতিমতো চমকে যায় ওই কিশোরী। কিন্তু তার কাছে আর কোনও জামাকাপড় নেই, এ কথা বলায় ওই কিশোরীকে বাসে তুলতেই অস্বীকার করেন চালক।


সম্প্রতি ইজরায়েলে ঘটেছে এই ঘটনাটি। গোটা ঘটনায় ওই কিশোরী কেবল অস্বস্তিতেই পড়েনি, এই ঘটনায় সামনে এসেছে লিঙ্গবৈষম্যের সেই চিরাচরিত প্রশ্নটিও। তামারা বলেছে, এহেন ঘটনায় সে এতটাই হকচকিয়ে গিয়েছিল যে ওই বাসচালকের কথার পালটা জবাব সে দিয়ে উঠতেই পারেনি। কিন্তু একইসঙ্গে তার প্রশ্ন, তার জায়গায় কোনও ছেলে থাকলেও কি এমন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটত?


জাতীয় গণপরিবহন সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই কিশোরীর মা। যে জায়গাটি ব্যক্তিগত নয়, বরং একটি গণপরিবহন, সেখানে ওই বাসচালকের আচরণ নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ এবং মর্যাদাহানিকর বলেই মনে করেছেন তিনি। কেউ কী পোশাক পরবে, তা কাউকে বলে দেওয়া যায় না বলেই তাঁর মত। এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে ওই বাস চালক এবং সংস্থার ম্যানেজারকে অন্তর্বর্তী শুনানির জন্য তলব করেছে বাস সংস্থা। শুনানির ফল কী দাঁড়ায়, তার অপেক্ষাতেই রয়েছে ওই কিশোরী এবং তার পরিবার।