আশাশুনিতে দুর্ভোগ কাটছে না বিচার প্রার্থীদের !

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: রবিবার ২৩শে জানুয়ারী ২০২২ ০৬:০৮ অপরাহ্ন
আশাশুনিতে দুর্ভোগ কাটছে না বিচার প্রার্থীদের !

আশাশুনি উপজেলা আদালত জেলা সদরে থাকায় আশাশুনিবাসীর জনস্বার্থ দারুণভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। উপজেলা আদালত জেলা সদরে অবস্থানের কারণে মামলা-মোকাদ্দমার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ করে মফস্বলের বিচার প্রার্থীরা চরম ভোগান্তি, নানামুখি হয়রানি, সময় ও অর্থের অপচয় তো হচ্ছেই পাশাপাশি সুবিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে হরহামেশাই। 


বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত এইচ এম এরশাদ উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে ১৯৯৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা পদ্ধতি বাতিল করেন। উপজেলা কোর্ট নিয়ে যাওয়া হয় জেলা কোর্ট ভবনে। 


এ ঘটনায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১বছর পর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে বিএনপি সরকার কর্তৃক বিলুপ্ত উপজেলা পদ্ধতি পুনরায় চালু করেন আওয়ামীলীগ সরকার। আইনজীবী, বিচারক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ উপজেলা কোর্ট উপজেলা সদরে রাখার পক্ষপাতিত্ব করায় সরকার উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ এর প্রথম তফসিলের তৃতীয় কলামে থানাকে উপজেলা করা হয়। থানা শব্দের পরিবর্তে উপজেলা শব্দ ব্যবহারের আদেশ জারি করা হয়। 


এত কিছু হলেও আশাশুনি উপজেলার পুরাতন উপজেলা কোর্ট এখনও রয়ে যায় জেলা কোর্ট ভবনে। সরকারী গেজেট সূত্রে জানাগেছে, বর্তমানে উপকূলীয় ১৫টি উপজেলায় উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে-কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া (কক্সবাজার), লামা (বান্দরবান), সন্দ্বীপ, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম), হাতিয়া (নোয়াখালী), মনপুরা (ভোলা), কলাপাড়া (পটুয়াখালী), পাইকগাছা, কয়রা (খুলনা), আমতলী, পাথরঘাটা (বরগুনা) জকিগঞ্জ (সিলেট) ও দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)। 


এদিকে আশাশুনি উপজেলা কোর্ট জেলা সদরে স্থানান্তরিত হওয়ায় বিচারপ্রার্থী ও জনগণের দুর্ভোগ এবং হয়রানির যেন শেষ নেই। আদালত প্রাঙ্গণে লোকজনের ভিড় এতোবেশি যে বিচারক, আইনজীবী, বাদী-বিবাদী, পুলিশ ও সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় সুষ্ঠু ও নিরিবিলি পরিবেশ বজায় থাকে না। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে দীর্ঘ ৩০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিচারের আশায় জেলা সদরে যেতে হয়। 


কোনো কারণে মামলার কাজ না হলে মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে না পেরে জেলা সদরের হোটেলের বাসিন্দা হতে হয়। এতে করে আর্থিক ক্ষতি, মানসিক যন্ত্রণাসহ নানামুখি ঝামেলায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় বিচার প্রার্থীদের। 


বাদী-বিবাদীদের উপজেলা আদালতে যে মামলা নিষ্পত্তি করতে দেড়-দু’হাজার টাকা লাগতো, বর্তমানে জেলা কোর্টে তা খরচ হয় ১০ হাজার টাকার ওপরে। আর এসকল সমস্যার একটাই সমাধান তাহলো, উপজেলা কোর্ট উপজেলা সদরে স্থানান্তরিত করা। এতে করে সব ভোগান্তি লাঘব হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। 


এব্যাপারে আশাশুনি সদরের নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান এস এম হোসেনুজ্জামান হোসেন বলেন, উপজেলা সদরে কোর্টের কার্যক্রম শুরু হলে জনগণ তাদের উপজেলাতেই একজন ম্যাজিস্ট্রেট পেতো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা সদরে ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক। অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনায় জেলা সদর থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আসতে যে সময় লাগে ততক্ষণে ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যায়। ইউএনও’র কাছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকলেও তিনি জনগণের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ততটা পরিচিত নন। 


তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ১৬৪ ধারায় আসামীর স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি ও ভিকটিমের ডায়িং ডিক্লেরেশনের কাজ সারতে জনগনসহ থানা পুলিশকে জেলার কোর্টে ধর্ণা দিতে হয়। এদিকে স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী উপজেলা পর্যায়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে আশাশুনিতে। 


মামলা মকদ্দমার সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তি বলেন, কোর্টে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের উপস্থিতি থাকায় আইনি সেবা নিতে হিমসিম খেতে হয় তাদের। যদি উপজেলা সদরে কোর্ট থাকতো তবে ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমতো আশাশুনি বাসীর। বিচার ব্যবস্থায় বিশেষ মহলের সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে উপজেলা কোর্টকে জেলা কোর্ট ভবনে বহাল রাখা কারও কাম্য হতে পারে না। 


উপজেলা কোর্ট উপজেলা সদরে স্থানান্তরে আইনগত কোনো বাধা নেই; প্রয়োজন শুধু সরকারি বিশেষ ঘোষণার। তাই বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের দোগোড়ায় এনে বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি ও হয়রানি লাঘবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা আশাশুনিবাসীর।