প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৫
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বহুদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, প্রাচীন যুগের ইমাম, মুজতাহিদ এবং আলেমরা কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের মাধ্যমে এ বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তাঁদের মতে, প্রিয় নবীর জন্মদিনে আনন্দ উদযাপন করা শুধু বৈধই নয়, বরং এটি এক উত্তম আমল।
কোরআনের সূরা ইউনুসের ৫৭-৫৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, তাঁর অনুগ্রহ ও রহমতের জন্য আনন্দ প্রকাশ করতে। তাফসিরকারগণ ব্যাখ্যা করেছেন যে, ইসলাম ও কোরআনই মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম রহমত। এছাড়া সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই তাঁর আগমনের দিন আনন্দ উদযাপন করা কোরআনের আলোকে উৎসাহিত হয়েছে।
হাদিসের বর্ণনায়ও মিলাদ উদযাপনের প্রমাণ রয়েছে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সোমবার রোজা রাখার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, এদিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং নবুয়াত লাভ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য সাহাবিদের বর্ণনায়ও দেখা যায়, তাঁরা নবীর জন্মসংক্রান্ত ঘটনাবলী শুনে খুশি প্রকাশ করতেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করতেন।
ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, সাহাবিদের মধ্যে কেউ কেউ ঘরে বসে নবীর জন্মকাহিনী আলোচনা করতেন এবং দরুদ শরিফ পাঠ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম তাঁদের এই কাজে সন্তুষ্ট হতেন এবং তাঁদের জন্য শাফায়াতের সুসংবাদ দিতেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, মিলাদ পালন নবীর সুন্নাহ বিরোধী নয়।
এছাড়া হাদিসে এসেছে, নবীর জন্মের সময় তাঁর মাতার কাছ থেকে এমন এক নূর প্রকাশ পেয়েছিল যার আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। এসব বর্ণনা নবীর জন্মদিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরে।
বর্তমান সময়ে কিছু গোষ্ঠী মিলাদ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। অথচ কোরআন ও হাদিসের আলোকে দেখা যায়, এটি এমন একটি ইবাদত যা আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম। আলেমরা বলেছেন, রাসূলের জন্মদিনে আনন্দ প্রকাশ করা তাঁর আনুগত্যেরই বহিঃপ্রকাশ।
মুসলিম উম্মাহর উচিত নবীর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের এই ঐতিহ্য বজায় রাখা। তবে তা অবশ্যই ইসলামি আদর্শ ও শালীনতার মধ্যে থেকে করতে হবে। কারণ মিলাদ উদযাপন শুধু আনন্দ নয়, বরং নবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম।
আল্লাহ তায়ালা যেন মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং নবীর জন্মদিনে খুশি উদযাপনের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি ও শাফায়াত লাভের তাওফিক দেন।