সেই ইউএনও ফের সমালোচনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি- নেত্রকোনা
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৪ই জানুয়ারী ২০২২ ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
সেই ইউএনও ফের সমালোচনায়

বার বার বির্তকে জড়াচ্ছেন নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা সুলতানা। সঠিক দায়িত্ব পালনে যতটা না নজরে এসেছে, তার চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন সরকারি ঘর নির্মাণ করতে জমি মালিকদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে।


এমন কাণ্ড ঘটানোর পর স্থানীদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে নিজ কার্যালয়েও ফিরতে হয়েছে তাকে। এবার সেই ইউএনও আবারও সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। উপজেলার যাদপুরে এক হত্যাচেষ্টা মামলার আসামির বাড়িতে আপ্যায়নের অতিথি হয়ে যাওয়ায়। যা নিয়ে রীতিমতো যাদপুরের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।


তারা বলছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। তার এমন কাণ্ডে জনগণ হতভম্ব।


এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, এই ইউএনও এর আগেও গত ৫ জানুয়ারি ইউপি নির্বাচনের দিনে মনগড়াভাবে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পথচারীদের মোটরসাইকেলের চাকা ফুটো করে দেন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় পরদিন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগও করেন এসএ টিভির সাংবাদিক।


জানা গেছে, আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রাজস্ব শাখায় (মুন্সিখানা) কর্মরত অফিস সহকারী সিদ্দিকুর রহমান আশিল মিয়ার নামে হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে। এছাড়াও প্রভাব খাটিয়ে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে মানুষকে হয়রানির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়েও গণস্বাক্ষরিত অভিযোপত্র জমা দেন এলাকাবাসী।


এমন অভিযোগ থেকে বাঁচতে চাকরির ক্ষমতা খাটিয়ে উল্টো ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ এনে আদালতে কাউন্টার মামলা করেন সিদ্দিকুর রহমান আশিল মিয়া। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।


এরমধ্যে ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) নিজস্ব সিকিউরিটি ও কর্মচারীকে নিয়ে উভয়পক্ষের অভিযোগ শুনানিতে যান ইউএনও মাহফুজা সুলতানা। সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।


কিন্তু সেখানে উভয়পক্ষের কোনো বক্তব্য তিনি শোনেনি। বরং ইউএনও’র সামনেই হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি সিদ্দিকুর রহমান উল্টো বাদীপক্ষের লোকজনদের ধমকের সুরে জেরা শুরু করেন।


এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় সাংবাদিকরা। এতে ক্ষেপে যান ইউএনও, তিনি এ ঘটনার বিষয়ে রেকর্ড করতে নিষেধ করেন। একই সঙ্গে এখানে সাংবাদিকদের আসতে কে বলেছে? জানতে চেয়ে অশালীন আচরণ শুরু করেন তিনি। 


এর পরপরই জামিনে মুক্ত আসামি সিদ্দিকুর রহমান আশিল মিয়ার বাড়ি থেকে আসা আপ্যায়নের নাস্তা পানি গ্রহণ না করেই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।


এদিকে ভিত্তিহীন মামলার তদন্তে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতি ও একতরফা সাক্ষ্য গ্রহণের ঘটনা বিরল বলে স্থানীয়রা মন্তব্য করেন। সরকারিভাবে প্রভাব বিস্তারসহ জনগণের প্রতি অমানবিক আচরণ করার অভিযোগ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এলাকাবাসী।


শুনানির চিঠি পাঠিয়ে এসে এমন নামকাওয়াস্তে পক্ষপাত তদন্তে আবার কিছু না বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করায় ইউএনও’র কাণ্ডে অনেকটাই বিভ্রান্তিতে পড়েছেন গ্রামবাসী। স্থানীয় প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার এমন ভূমিকায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্নের। এ ব্যাপারে ইউএনও সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। 


আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর ইকবাল জানান, এতে মামলার তদন্তে কোনো প্রভাব পড়বে না। যেহেতেু জেলা প্রশাসনে কর্মরত, তাই হয়তো অনুসন্ধানে গিয়েছিলেন।


প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর নির্মাণে জমির মালিকদের উচ্ছেদ করে গৃহ নির্মাণ করতে চাইলে আদালতের স্টে অর্ডারে এবং জনগণের তোপের মুখে গাড়ি থেকে না নেমেই এলাকা ছেড়েছিলেন এই ইউএনও।


এদিকে বিষয়টি জেনে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মো. আব্দুর রহমান গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।