যমুনার বালুচরে বাড়ছে তামাকের আবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুয়াদ হাসান রঞ্জু, উপজেলা প্রতিনিধি, ভূঞাপুর- টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: শনিবার ৫ই মার্চ ২০২২ ০৬:০৩ অপরাহ্ন
যমুনার বালুচরে বাড়ছে তামাকের আবাদ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের যমুনার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে বেড়েই চলেছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও বিষাক্ত বিষবৃক্ষ তামাকের আবাদ। তামাক কোম্পানিগুলোর দেয়া সুবিধার কারণে উপজেলার চরাঞ্চলের এলাকাগুলোতে বিষাক্ত তামাক চাষ করছে কৃষক। অধিক লাভের আশায় রবিশস্যের বদলে তামাক চাষের প্রতি ঝুঁকছেন চাষিরা। বিনা মূল্যে বীজ, ঋণে সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছে এসব কোম্পানিগুলো। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় তামাকের ক্ষেতে কাজ করছেন শিশু, নারী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।


সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার অর্জুনা ও গাবসারা চরাঞ্চলের রামপুর, রায়ের বাসাইলে বামনহাটা সহ বেশ কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন কিছু এলাকায় চাষ হচ্ছে ‘বিষবৃক্ষ’ তামাকের। রবিশস্যের চাষ বাদ দিয়ে অধিক লাভের আশায় এবং তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক সুবিধা পাওয়ায় এখানকার কৃষকরা আকৃষ্ট হচ্ছে তামাক চাষে।


উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হলেও বিড়ি কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসের কারণে তামাক চাষ বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিবছর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে  তামাকের চাষ বেড়েই চলেছে।


তামাক চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অর্থ সংকটে থাকেন চরাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো ওই সব চাষিদের তামাক চাষে উৎসাহিত করেন এবং তাদের মধ্যে কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে তামাকের সার ও বীজ সরবারহ করে থাকেন। আর এ কারণেই তারা  তামাক চাষ করে থাকেন।


এ ছাড়াও শর্ত ছাড়া নগদ অর্থ প্রদানসহ কোম্পানির নিজস্ব সুপারভাইজাররা প্রতিনিয়ত তামাক চাষিদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও তামাক ক্রয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিয়তাও দিয়ে থাকেন কোম্পানিগুলো। মূলত এ কারণেই তামাক চাষ স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর হলেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় তামাক চাষ করেন তারা।


উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, তামাক চাষের জন্য কোম্পানিগুলো অগ্রিম ঋণে সার ও নগদ অর্থ দিয়ে থাকেন এবং ক্রয়ের শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়। তাই আমরা ক্ষতিকর জেনেও অধিকার লাভের আশায় তামাক চাষ করি।


বামনহাটা এলাকার তামাক চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় তামাকের ফলন হয় ৭ থেকে ৮ মণ। কোম্পানিগুলো আমাদের কাছ থেকে প্রতিমণ তামাক ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায় ক্রয় করে।


তবে সরকার যদি কোম্পানিগুলোর মতো বিনা শর্তে ঋণসহ ফসল ক্রয়ের নিশ্চিয়তা দেন, তাহলে তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে ধান, ভুট্টা, গম, আলু, সরিষাসহ অন্য ফসল চাষ করবেন তারা।


এবিষয়ে তামাক-আড়তদারদের কাছে জানতে চাইলে তারা  বলেন, এখানকার চরাঞ্চলের  মানুষের উৎপাদিত পণ্যের বেশির ভাগ আয় আসে তামাক থেকে। কৃষকরা আমাদের কোম্পানি থেকে বিনামূল্যে সার, বীজ ও নগদ অর্থ সহ ক্রয়ের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকি। যা দিয়ে কৃষকরা সংসারের খরচ সহ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচের যোগান দেন। তবে অন্যান্য ফসলের ক্রয়-বিক্রয়ের নিশ্চয়তাসহ ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু করা হলে তামাক চাষের প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে। তামাক কোম্পানির কর্মীরা প্রতিদিন মাঠে গিয়ে চাষির সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন। 


এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে উপজেলা কৃষি বিভাগ যথেষ্ট আন্তরিক ও তৎপর রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে ধান, পাট, ভুট্টা, গম, বাদাম, আলু চাষে নানা পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো তাদের সামনে তুলে ধরলে তামাক চাষ থেকে তারা বেরিয়ে আসবেন। এবছর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলে ১২ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কারণে কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।