বরিশালে উদযাপিত হচ্ছে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শ্মশান দিপালী উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শনিবার ১১ই নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৪ অপরাহ্ন
বরিশালে উদযাপিত হচ্ছে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শ্মশান দিপালী উৎসব

বরিশালে উদযাপিত হচ্ছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ‘শ্মশান দিপাবলী উৎসব। আজ শনিবার নগরীর কাউনিয়া মহাশ্মশানে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের প্রয়াত স্বজনদের স্মরণ এবং আত্মার শান্তি কামনায় সন্ধ্যার পরপরই মোমবাতি, ধূপকাঠি ও প্রদীপ প্রজ্বলন করেন। প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ এই মহাশ্মশানটি। 


সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের আত্মার শান্তি কামনা ও নিজেদের পূর্ণ লাভের আশায় প্রতিবছর ভূত চতুর্দশীর পূণ্যতিথিতে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মহাশশ্মানে উদযাপিত হয় এই শ্মশান দীপাবলি। স্থানীয়দের দাবি, দুশো বছর ধরে চলে আসছে এই উৎসব। 


এদিকে এ উৎসবকে ঘিরে মহাশ্মশান রক্ষা কমিটি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।


জানাযায়, ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে বরিশালে আয়োজন করা হচ্ছে এ উৎসব। ভারতসহ অন্যান্য দেশে এক স্থানে এত সমাধি বেদি নেই। পুরাকীর্তি আর দৃষ্টিনন্দন এ মহশ্মশানে কয়েক বছর পূর্বে ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের সমাধিসৌধ। এখানে রয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিল্পবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসিমা, শিক্ষাবিদ কালি চন্দ্র ঘোষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও খ্যাতিমান মানুষের সমাধি রয়েছে এই মহাশ্মশানে।


প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মৃতদের স্বজনরা এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকেন। নতুন পুরনো মিলিয়ে এখানে প্রায় লক্ষাধিক সমাধিসৌধ রয়েছে। 


মহা শ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার জানিয়েছেন, দিপালী উৎসবকে কেন্দ্র করে তাদের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। ৯৭২টি বেওয়ারিশ সমাধী রয়েছে। আমাদের শ্মশান রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে সেগুলোতে হলুদ রঙ করা হয় এবং প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। তিনি আরও জানান, শ্মশান কমিটির পক্ষ থেকে ১০০ জন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবির বাইরে পুলিশ, র‌্যাবসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং যেকোন দুর্ঘটনা মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস টিম সার্বক্ষণিক ছিল। এছাড়া শ্মশানের বাইরে এবং ভেতরে সিটি কর্পোরেশন থেকে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।


এদিকে উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ দিপালী উৎসব ঘিরে তৎপর রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মহাশ্মশানসহ আশপাশের এলাকার টহল ব্যবস্থা জোড়দার করেছে। 


বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এটা সর্ববৃহৎ উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আমাদের পক্ষ থেকে নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।


প্রসঙ্গত: শনিবার বিকেল ৩:২ মিনিটে ভুত চতুর্দশী শুরু হয়ে আজ রবিবার দুপুর ২:৫৮ মিনিটে শেষ হবে এবং রাত ১২.১ মিনিটে শশ্মান কালিপূজা শুরু হবে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ভূত চতুর্দশী ও পুণ্য তিথিতে এই আয়োজন বরিশালে সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব বলে বিবেচিত।