মৃত্যু কামনা নাকি সুস্থতার প্রতিক্ষা? (পর্ব ৪)

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: বুধবার ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:১৭ অপরাহ্ন
মৃত্যু কামনা নাকি সুস্থতার প্রতিক্ষা? (পর্ব ৪)

আইসিইউতে পিপিই পরা লোকজনের ছুটোছুটি। কে নারী? আর কে পুরুষ? কে ডাক্তার? আর কে নার্স? চেনাই মুশকিল। ঘন্টা খানিক পর ডাক্তার সাহেব ফিরে এলেন তার চেম্বারে। রোহান ভেবেছিল ডাক্তার বোধহয় ভুলেই গেছে তার কথা। ডাক্তার এর সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে রোহান জানতে পারলো তারা দুজন একই ব্যাচের কর্মকর্তা। 


ডাক্তার সাহেবদের আচরন নিয়ে লোকেদের বিস্তর অভিযোগ আছে কিন্তু এই ভদ্রলোকের ব্যবহারে রোহানের আশিভাগ টেনশন দূর হয়ে গিয়েছে। 


ডাক্তার আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন এখানে সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা হয়। সে তার নিজের মাকে ও এখানে চিকিৎসা করিয়েছেন। দুর্ভাগ্য একটাই মাকে বাঁচাতে পারেনি। কথা শুনে একটা আশার আলো দেখছিল রোহান। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওইদিন ডাক্তার তৌফিকের ১৪ দিনের টানা ডিউটির শেষ দিন ছিল অর্থাৎ আগামি ১৪ দিন তার আইসোলেশনে থাকতে হবে। 


অতি আশাবাদী রোহান বলেছিল “তৌফিক ভাই ১৪ পর যখন আবার আসবেন আমরা তখন সুস্থ শ্বাশুড়িকে নিয়ে বাসায় চলে যাব। আমাদেরকে মনে হয় পাবেন না।”


ডাক্তার কিছু না বলে কিছুক্ষন মাথা নিচু করে থাকলেন কথা ঘুরিয়ে বললেন 'ভাই আপানার রোগীর সিরিয়াল ২৫ নম্বর। সাথে এটাও বললেন, যদি কোন রোগী মারা যায় অথবা সুস্থ হয় তবেই বেড খালি হয়। যদিও দ্বিতীয় ঘটনাটা এখানে বিরল।' 


রোহানের মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল। কিভাবে এত বড় লাইন সে ডিংগাবে? শাশুড়িকে যে বাঁচাতেই হবে, চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলে সে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না। তাহলে কি সে এখন থেকে কারো মৃত্যুর জন্য, না কি সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করবে? নাকি অচেনা অজানা  কারো মৃত্যু কামনা করবে? মনে মনে ভাবে আল্লাহ একি পরীক্ষায় ফেলল? তার রোগী ভর্তি হবার পরও তো কেউ না কেউ মৃত্যু কামনা করবে। (চলবে)


----- লেখকঃ আব্দুল হালিম, সহকারী পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ পুলিশ।