মৃত্যু কামনা নাকি সুস্থতার প্রতিক্ষা? (শেষ পর্ব)

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: রবিবার ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৩১ অপরাহ্ন
মৃত্যু কামনা নাকি সুস্থতার প্রতিক্ষা? (শেষ পর্ব)

ডাক্তার প্রতি ঘন্টায় অর্ডার চেঞ্জ করছেন, সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে রোহান আর রেনুর। কোন ওষুধ আছে আর কোনটা বাদ তা মনে রাখাটাই একটা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে তাদের জন্য। খাতায় নোট করা শুরু করল তারা কিন্তু কোন কুল কিনারা করতে পারল না। ঘুম, খাওয়া পর্যাপ্ত না হওয়ায় হাত- পা কাপছিল, মাথা ঠিকভাবে কাজ করছিল না তাদের। একের পর এক চিকিৎসা চলছে। রোগীকে রেখে ১০ মিনিটের জন্যও বাইরে যাওয়ার উপায় নাই।


ডাক্তার কখনো মিথ্যা আশ্বাস দেয়নি, সবসময় বলেছে আপনাদের রোগীর অবস্থা খুব খারাপ, আপনারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেন। বিশেষ করে রোহানকে ডেকে বলেছে রোগীর মেয়েকে মানসিকভাবে আপনি প্রস্তুত করেন। যে কোন সময় খারাপ কিছু হতে পারে, সত্যিকার অর্থে লাইফ সাপোর্ট একটা সান্তনা। এখান থেকে রোগী ফেরার নজির খুব একটা নেই। তিনটা মানুষ রাত দিন এক করে আইসিইউতে আছি, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি মনিটরের দিকে বিপি, স্যাচুরেশন, পালস এই বাড়ে তো এই কমে। যেন জীবন মৃত্যুর দোলাচালে দুলছে। 


প্রতিকী পাশা খেলার মাধ্যমে ঈশ্বর যেমন অহপরবহঃ গধৎরহবৎ এর 'জীবন' এবং তার সহযাত্রীদের 'মৃত্য' নির্ধারণ করেছিলেন; তেমনি উপরে যেন কোন এক হিসেব-নিকেশ চলেছে। তারা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না তাদের জন্য কি নির্ধারন করা হচ্ছে। একটা সময় সব হিসেবের অবসান হল স্যচুরেশন পাওয়া যাচ্ছিল না, বিপি নেই, পালস নেই, উচু নিচু লাইনগুলো সব সমান হয়ে গেছে। 


অবশেষে সকল চেস্টার অবসান। রেনুর গগনবিদারী চিৎকার, আর শাওন আইসিইউর মেঝেতে বসে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রোহান আবার দৌড়াল মৃতদেহ গোসল করানো, বাড়ির পথে রওয়ানার প্রস্তুতি নিতে। 


----- লেখকঃ আব্দুল হালিম, সহকারী পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ পুলিশ।