সদরঘাট-গুলিস্তান ‘সরাসরি’ সড়ক চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: রবিবার ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:১১ অপরাহ্ন
সদরঘাট-গুলিস্তান ‘সরাসরি’ সড়ক চাই

ঢাকার প্রধান নদী পথ সদরঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ১৫০টি ডাবল ডেকার লঞ্চ দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ- পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ছেড়ে যায় এবং সমপরিমাণ লঞ্চ ফিরে আসে। অথচ এই সদরঘাট যাবার জন্য নেই একটি ভালো রাস্তা বা সরাসরি যোগাযোগের কোন পথ । তার মধ্যে যতটুক রাস্তা রয়েছে তার অধিকাংশ থাকে দখলে । 


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদরঘাট টার্মিনাল, শ্যামবাজার থেকে সদরঘাট টার্মিনাল এবং বাবু বাজার ব্রিজ থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত রাস্তার বেশিরভাগ জায়গা হকার, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী, ও অলস যানবাহন রাখার ফলে যাতায়াতে ‘চরম’ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা, যা ঈদের সময় কয়েকগুণ বাড়ে।


এ বন্দর দিয়ে সারাদেশে প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী চলাচল করেন এবং প্রচুর পণ্য ও নৌপথের পরিবহন হয়ে থাকে। দিনের অন্য সময়ে অন্যান্য রুটের পাশাপাশি প্রতিদিন সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত এক ঘন্টা পর পর চাঁদপুর নদী বন্দরের উদ্দেশ্যে বড় নৌযান চলাচল করে।


এছাড়া নিম্নবিত্ত কর্মজীবী মানুষের একটা বড় অংশ সদরঘাটের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীর উভয় পাড়ে বসবাস করেন, যাদের বড় অংশ নৌকায় করে বন্দর দিয়ে সহজে ও স্বল্পসময়ের মধ্যে যাতায়াত করেন। সড়কপথে যানজট, ফেরি সংকটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নৌপথে এ ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকায় দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য নৌপথ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।


অথচ সদরঘাটের সামনের রাস্তা কম প্রশস্ত হওয়ায় সেখানে ‘প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়’ এমনকি  নদীবন্দরে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধাও নেই। ফলে মালবাহী ট্রাক ও যাত্রীদের ব্যক্তিগত গাড়ি যত্রতত্র পার্কিংয়ের ফলে যানজট আরও বাড়ে।


তারপরও অনেক সমস্যার মধ্যে ও এ বন্দরের টার্মিনালে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন আগের তুলনায় বহুগুণে বেড়েছে। লঞ্চেও বিভিন্ন শ্রেণির আসন যুক্ত করায় সব শ্রেণি পেশার মানুষ নিয়মিত লঞ্চে যাতায়াত করছেন।


এমন প্রেক্ষাপটে সদরঘাটের সঙ্গে যাতায়াতে যেসব রাস্তা ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে প্রায় সবসময় যানজট লেগে থাকে। আবার ঘাটের আশেপাশে বিভিন্ন পাইকারি বাজার থাকায় এসব এলাকায় ব্যবসায়িক কাজেও প্রচুর মানুষ আসা-যাওয়া করেন। ফলে সদরঘাটকেন্দ্রীক যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ফলে নৌযান যাত্রীদের প্রতিদিনই যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।


যাত্রীদের সুবিধার জন্য ও সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রথম দরকার সদরঘাট ও পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া । কারন রাস্তা প্রশস্ত করা ছাড়া ওই এলাকার যানজট দূর করা যাবে না। 


এছাড়াও আরও দরকার , নদী বন্দরের বাম পাশে শ্মশানঘাট থেকে অত্যাধুনিক টার্মিনাল ঘাট নির্মাণ । ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ: দ্বিতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢাকার চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সীমানা পিলার, বিনোদন পার্ক, নির্মাণ যার কিছুটা কার্যক্রম চলছে।


এছাড়া ‘আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ বিশেষ ধরনের পন্টুন নির্মাণ’ শীর্ষক আরেক প্রকল্পের আওতায় নৌযানে যাত্রীদের সহজে ওঠানামা এবং নৌপথে নৌযানের সহজ বার্থিংয়ের সুবিধার্থে পন্টুন ও গ্যাংওয়ে জেটি এবং দৃষ্টিনন্দন বুকিং কাউন্টার স্থাপন করা। যা বিমানবন্দর বা বাস কাউন্টার গুলোতে দেখা যায় কেবল এই নদীবন্দর নেই । 


ঢাকা থেকে প্রতিদিন অত্যাধুনিক ও নান্দনিক লঞ্চ নামছে অথচ এই লঞ্চ গুলোতে যাবার মতো একটি সরাসরি পথ নেই তাই উত্তর ঢাকার অধিকাংশ মানুষ গাড়িতে যেতে বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন তাদের গন্তব্যে।অথচ তাদের ১ম পছন্দের যানবাহন হচ্ছে এই লঞ্চ যাত্রা। ঢাকা থেকে দক্ষিণের সকল যাত্রীদের কাছে নির্ভেজাল বা আরামে গন্তব্যর নাম হচ্ছে লঞ্চ ভ্রমণে যাওয়া । তাই অচিরেই  সদরঘাট থেকে সরাসরি গুলিস্তান মুখি উড়াল সড়কের দাবি করছেন এই লঞ্চ যাত্রার সাথে সংযুক্ত সকলে । তাতে এই দক্ষিণের মুখী যাত্রীদের বহু সময় এবং কষ্ট দুর হবে ।


প্রতিনিয়ত ঢাকা থেকে বরিশাল মুখী অত্যাধুনিক লঞ্চ নামছে যা ভ্রমণে খুব আরামদায়ক এবং লাক্সারিয়েস কিন্তু এই রাস্তা আর জ্যামের জন্য মানুষ কষ্ট করে যেতে চায় না । একটি সরাসরি রাস্তা হলে বরিশাল তথা কুয়াকাটা মুখী পর্যটকের ঢল নামবে আশার আলো দেখছি। এই সরকারের মেগা প্রকল্পের মতো করে না হলে ও ছোট করে হলেও  এই একটি নির্ভেজাল রাস্তা বানিয়ে দিবেন দক্ষিণের মানুষের জন্য । সেই প্রত্যাশায় বরিশাল বিভাগের মানুষ অপেক্ষা করছেন।